‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আবার কীসের ধর্মঘট’

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০১৭, ১৫:১৭

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বেতিলা এলাকার আব্দুল কাদের। তিনি সাভারের জাহাঙ্গীরনগর এলাকার ইসলামপুর যাবেন ছোটবোনের বাসায়। এ কারণে বুধবার সকালে স্থানীয় বাজার থেকে দেশি গাভীর পাঁচ লিটার দুধ কিনেছেন আব্দুল কাদের। সাথে নিয়েছেন আপেল, কমলাসহ বিভিন্ন রকমের ফল। বেলা ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েন। এই বয়সে এতগুলো খাবারের জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে হেঁটেই জাহাঙ্গীর নগর রওনা দেন তিনি।

এ সময় ঢাকাটাইমসের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধির সাথে আলাপ হয় আব্দুল কাদেরের। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, হেঁটেই কি যাবেন? তিনি বলেন, ‘কিরবো, গাড়ি নাই হেঁটেইতো যেতে হবে।’ এই বয়সে হেঁটে যাবেন কষ্ট হবে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনো শরিলে বল আছে দেখি কতদূর যেতে পারি।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘আজ কি হরতাল।’ বলা হলো না, পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আবার কিসের ধর্মঘট। এটা শেখ হাসিনা বন্ধ করতে পারেন না। আমাগো দুর্ভোগ তিনি দেখেন না। এভাবে কি চলা যায়। কত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে তাদেরতো দুর্ভোগের শেষ নাই।’

পাবনা থেকে সাহাবউদ্দিন ও রেজাউর রহমান এসেছেন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা আরিচা থেকে উথুলী এসেছেন সিএনজিতে এরপর সেখান থেকে ৪০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে মানিকগঞ্জ এসেছেন। এরপর আর কোনো পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন ঢাকায়। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে একজন রেজাউর রহমান বিরক্তির স্বরে বলেন, ‘আমরা তো মানুষ না। আমরা জীবজন্তু। পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধে সাধারণ  মানুষের দুর্ভোগ সরকার এটা দেখে না।’ এ সময় অন্য আরেকজন  সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘এসব কথা বলে লাভ হবে না শর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে।’

এরকম শতশত সাধারণ মানুষ ঢাকায় কর্মস্থলে যাবার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এসে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা পরিবহন পাননি। এই সুযোগে অসাধু অটোরিকশা, হেলোবাইক ও মোটর সাইকেল চালক যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেসব যাত্রী বেশি ভাড়া দিতে পারে তারা গন্তব্যস্থলে যায় আর যারা দিতে পারেনি না তারা হেঁটেই রওনা দেয়। আবার কেউ কেউ মিনি ট্রাক ভাড়া করে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যস্থলে যায়।

এরকম দুইজন জাহানারা বেগম  ও মনোয়ারা বেগম। জরুরি একটি কাজে গতকাল সকালে তারা দুজন আশুলিয়া পল্লী বিদুৎ থেকে এসেছেন মানিকগঞ্জ। এখন তারা বাড়ি যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে ধামরাই রওনা দিয়েছেন। সেখান থেকে বিকল্প আরেকটি পরিবহনে করে বাড়ি যাবেন তারা। এ সময় তারা বলেন, ‘আমাদের মতো নারীদের দুর্ভোগের শেষ নাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে মহাসড়ক দিয়ে চলা যায়?’ তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত দ্রƒত সমস্যার সমাধান করা।’

মানিকগঞ্জ থেকে গুলিস্তান চলাচল করা শুভযাত্রা চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আদালতের এমন রায় কোনোদিন দেখিনি। এই রায়ে হতাশ হয়ে সাধারণ শ্রমিকরা গাড়ি চালাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘ফাঁসির দড়ি শ্রমিকদের গলায় লাগিয়ে তারা গাড়ি চালাবে না।’ 

(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)