বাঁশ ও ডাল দিয়ে রেললাইন মেরামত

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০১৭, ০৮:২০

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম

প্রায় দুই যুগ ধরে লক্কড়-ঝক্কড় পুরনো ট্রেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের যাত্রীরা। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য বরাদ্দ একমাত্র লোকাল ট্রেনটি বাঁশের ফালি দিয়ে মেরামত করা ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইনে চলছে ধীরগতিতে।

তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের টগরাইহাট রেলস্টেশনের কাছে জোতগোবরধন এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার রেলসেতুর ওপর রেললাইন ঠিক রাখার জন্য কাঠের স্লিপারে বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে। বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন মুক্তারাম ত্রিমোহনী এলাকায় একটি বক্স কালভার্টের ওপর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের চালকরা জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ লাইনে ট্রেন নিয়ে আসতে চান না বলে রেল যোগাযোগে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে ট্রেন যোগাযোগ সচল রাখেতে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রেলসেতুর ওপর কাঠের স্লিপার বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। রেললাইনের উভয় দিকে ঠেস দেয়া হয়েছৈ গাছের সরু ডাল দিয়ে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এই উপায়ে রেললাইন সচল রাখা হয়েছে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।  

এদিকে কুড়িগ্রামের রমনা থেকে ঢাকা ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবির মুখে একটি ট্রেন ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে তিস্তা থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা স্টেশন পর্যন্ত আসা-যাওয়া করছে। লক্কড়-ঝক্কড় ধীরগতির এ ট্রেনে ওঠেন না বেশির ভাগ যাত্রী।  শুধু দিনমজুর শ্রেণির মানুষ বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনটি বেছে নেয়। গণকমিটির দাবি, তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার করার।

অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার রেললাইনে সাতটি স্টেশনের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এ স্টেশনগুলো কোনোরকমে সংস্কার করা হলেও অনেক স্টেশনে নেই টিকিট কাউন্টার। পাশাপাশি ট্রেনে চেকার না থাকায় টিকিট কাটার গরজ বোধ করে না যাত্রীরা।

কুড়িগ্রাম রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ নলেজ বলেন, ‘রমনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামের আন্তনগর ট্রেন চালু, চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ প্রস্তাবিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে রেললাইন সংযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি আমরা। আমাদের দাবির মুখে রেলের মহাপরিদর্শক আকতারুজ্জামান গত ৫ ডিসেম্বর রেলপথ পরিদর্শনে আসেন। তিনি রেলপথ সংস্কারসহ আন্তনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারসহ আমাদের দাবিগুলো পূরণ হবে। আর এর মাধ্যমে কিছুটা গতি আসবে  পিছিয়ে পড়া এ জনপদের মানুষের যাতায়াতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেললাইনের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট এবং রেললাইন অনেক পুরনো ও ব্যবহার অনুপযোগী। এই রেললাইনের সংযোগস্থলের অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় নাট-বল্টও নেই। এ অবস্থায় রেললাইনে বাঁশ ও গাছের ডাল ব্যবহার করায় ট্রেন যোগাযোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রেনচালক জানান, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ রেলপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন নিয়ে আসতে চাই না। কিন্তু  ওপরের নির্দেশে আসতে হচ্ছে।

রেলসেতুতে বাঁশের ফালি ও লাইনে গাছের ডাল লাগোনো সম্পর্কে জানতে চাইলে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রেললাইনে গাছের ডাল ও সেতুতে বাঁশ ব্যবহার করায় কোনো সমস্য নেই। আমরা সাধারণত বড় বা মেজর সেতুতে কাঠের স্লিপার যাতে স্থানচ্যুত না হয় সেজন্য লোহারপাত ব্যবহার করি। কিন্তু তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের সেতুগুলো মাইনর সেতু হওয়ায় সেগুলোতে বাঁশের ফালি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া না যাওয়ায় আমরা স্থানীয়ভাবে এটা করেছি।’

রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে এই পথে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করছে। রেললাইন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে কয়েক দফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হলেও কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য রেললাইন সোজা রাখার জন্য গাছের ডাল দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। তবে রেলপথ সংস্কার হলে কোনো সমস্যা থাকবে না।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/মোআ)