বগুড়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞায়ও কৃষকের জমিতে এলজিইডির রাস্তা

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০১৭, ১৫:৫০

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বগুড়ায় প্রভাব খাটিয়ে কৃষকের জমিতে পাকা রাস্তা নির্মাণ করেছে এলজিইডি। তাদের সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ঠিকাদাররা। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চার কৃষক বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বগুড়া জেলা প্রশাসক, ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ধুনট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ও নিমগাছি ইউপি চেয়ারম্যানকে। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার সিয়ালি মৌজায়।

রাস্তার কাজ বন্ধের জন্য ফারাইজুল হক প্রথমে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি একটি লিখিত আবেদন করেন। এরপরেও কাজ বন্ধ না হলে ফুলেজা বেগম, ফারইজুল হক, জেসমিন আকতার, কল্পনা খাতুন বাদী হয়ে ধুনট উপজেলা সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা নং ০৯/১৭। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত রাস্তা নির্মাণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদাল। 

অভিযোগকারী জমির মালিক ফারাইজুল হক বলেন, আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ঠিকাদাররা রাস্তাটি পাকা করেছেন। তিনি বলেন, তার জমির উপর দিয়ে ম্যাপে কোনো রাস্তা নেই। ওই জমির উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার একটা সরু আইল ছিল মাত্র। বর্তমানে সেই জমির উপর দিয়ে ১৩ ফুট পাকা রাস্তা জোর করে নির্মাণ করেছে উপজেলা এলজিইডি অফিস। এতে তার জমির অর্ধেকের বেশি রাস্তার মধ্যে চলে যাওয়ায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ধুনটের নিমগাছি ইউনিয়নের সিয়ালী মৌজায় নালিশী দাগের পূর্ব পাশের আইলের উপর দিয়ে লোকজন যাতায়াত করতো। কিন্তু বর্তমান আর এস জরিপ ওই জমির (সাবেক দাগ ১০৩৬ ও বর্তমান দাগ ২৩৯৫) পূর্ব পাশের (সাবেক দাগ ১০২৯, ১০৪০ বর্তমান দাগ ২৭৬৭, ২৭৬৬) জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য ম্যাপ থাকলেও সেখানে রাস্তা করেনি। অপরদিকে ম্যাপে না থাকলেও বর্তমান দাগ ২৩৯-তে জোর করে পাকা রাস্তা নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

মামলার বাদী ফুলেজা বেওয়া, জেসমিন আকতার, কল্পনা খাতুন, ফারাইজুল হক বলেন, তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তার কোনো ম্যাপ না থাকলেও ১৩ ফুট রাস্তা নির্মাণ করায় জমি হারিয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তারা বলেন, তাদের জমির উপর দিয়ে সরকারের রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন হলে আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণ করে নিলে তারা উপকৃত হতো।

আদালত রাস্তাটির নির্মাণকাজ বন্ধের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেও জোর করে ওই রাস্তার উপর পাকা রাস্তা নির্মাণ করায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

এবিষয়ে নিমগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আজহার আলী পাইকার ঢাকাটাইমসকে জানান, এলজিইডি ওই রাস্তাটি নির্মাণ করেছে, সেখান তার করার কিছু নেই।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ওই রাস্তা কিভাবে পাকা করা হলো জানতে চাইলে ধুনট উপজেলা প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। ওই রাস্তা পাকা হয়েছে সেটি তিনি জানেন না। অপরদিকে ম্যাপে উল্লেখ না থাকলেও নালিশকৃত জমিতে রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ম্যাপ দেখে রাস্তা নির্মাণ করিনি। জমি অধিগ্রহণও করা হয়নি বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে ঠিকাদার সেলিম, রাব্বানীর সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)