ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফসলি জমিতে তৈরি হচ্ছে ইট

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১০:১৭

মোহাম্মদ আরজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ফসলি জমির উর্বর মাটি তথা  টপ সয়েল বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। আর এসব উর্বর মাটি পুড়ে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি জমি।

একদিকে কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে কৃষি  শ্রমিকরা হচ্ছেন বেকার,  অন্যদিকে এই মাটি বহন করে ট্রাক্টরগুলো ভাঙছে উপজেলার সবগুলো সড়ক।

উপজেলার মোট জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৭ একর। তবে বিভিন্নভাবে জমি দখল ও মাটি বিক্রির কারণে এখন কৃষি জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬ শতাধিক ৬ একর। একসময় এসব জমিতে বছরে আমন, বোরো, আউশসহ তিন ধরনের ফসল উৎপাদন হলেও এখন বেশির ভাগ জমিতে বোরো ছাড়া একাধিক ফসল উ্ৎপাদন হয় না।

তবে এবার এর মধ্যে ১৩ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা মোট কৃষি জমির ৪০% কমে গেছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে এক সময় কৃষি জমি বিলীন হয়ে যাবে।

কৃষিনির্ভর বিজয়নগর উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় এবং মাটির দাম কম হওয়ায় সরকারি আইন ও পরিবেশ আইনকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ  না থাকায়  কয়েক বছরের ব্যবধানে নগরায়নের কারণে ও ব্যাঙ্গের ছাতার মত ফসলি জমির উপর প্রায় ৪০টি ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৩২টি ভাটার উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। আর এসব ইটের ভাটায় মাটির চাহিদা মেটাতে এক শ্রেণির দালালরা লোকদের বেশি ফসল উৎপাদনের লোভ দেখিয়ে জমির উপরিভাগের মাটি তথা টপ সয়েল  বিক্রি করতে উৎসাহিত করছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ইটের ভাটার আগুনের তাপের কারণে আাশপাশের জমিগুলোর মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় ও নদীগুলো দখল হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচের মৌসুমে জমিগুলোতে চারা রোপনের জন্য পানি পাওয়া যায় না। এসময় এক শ্রেণির দালালরা হতদরিদ্র কৃষকদের বুঝায় জমির উপরিভাগের মাটিতে শক্তি নেই। তাই ফসল উৎপাদন হয় না।

এ ব্যাপারে একাধিক কৃষক জানান, ফসলি জমিতে ইটের ভাটা করায় এর আশপাশের জমিতে ফসল উৎপাদন হয় না। ইটভাটার মালিকরা প্রথমে নিজের জমি থেকে মাটি কাটলেও পরে বাধ্য হয়ে জমিতে পানি পেতে অন্যরা মাটি বিক্রি করে।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মস্কর আলি জানান, জমির উপর ভাগের ১৫ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি মাটিকে টপ সয়েল বলা হয়ে থাকে। যাতে মাটির   উর্বররতা শক্তি  থাকে। এ মাটি বিক্রি করলে জমির শক্তি থাকে না। জমির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কৃষি জমি টেকাতে যেকোন উপায়ে কৃষকদের মাটি বিক্রিতে বাধা দিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উন নেছা শিউলি বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনসহ নগরায়ন করা নিষেধ। ফসলি জমিগুলো রক্ষা করতে শিগগির দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন কোন ইটের ভাটার অনুমোদন দেয়া হবে না।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)