গাজীপুরে অস্থায়ী রেলওয়ে কর্মচারীদের মানবেতর জীবন

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১০:৩২

শাহান সাহাবুদ্দিন, গাজীপুর

অভাব-অনটন পিছু ছাড়ে না। দীর্ঘ একযুগ চুক্তিভিক্তিক কর্মচারী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতন। সেটাও বন্ধ গত কয়েক মাস ধরে। সরকারি পোশাকসহ রয়েছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। চুক্তিভিক্তিক কর্মচারীদের উৎসব ভাতা তো পরের কথা, চিকিৎসা ভাতাও কপালে নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে বেতন দেয়ার কথা থাকলেও কয়েক মাসের বেতন একসাথে দেয়াই এখন নিয়ম। ধার-কর্জ এবং সুদের ঘানি সেই সাথে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হাঁপিয়ে উঠেছেন হতভাগ্য চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা।

চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের এই আর্থিক দুর্দশায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গাজীপুরে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং গেইটম্যান হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জীবন-যাপনের নিত্যদিনের চিত্র এটি। লাখো মানুষ ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাজীপুরে অস্থায়ী ভিত্তিতে লেভেল ক্রসিং গেইটম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শ্রীপুর এবং নরসিংদী পর্যন্ত ৮৮ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী গেইটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই গুরু দায়িত্ব পালনের পরও হতভাগ্য কর্মচারীদের ভাগ্য বদল হয়নি। গাজীপুরে লেভেল ক্রসিংগুলোর পাশে ছোট্ট একটি ঘরে তাদের হাহাকার দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়।

গাজীপুরে কর্মরত লেভেল ক্রসিং গেইটম্যানরা জানায়, তাদের বেতন কয়েক মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে চরম বিপাকে রয়েছে ৮৮ জন কর্মচারীর প্রায় ৬ শতাধিক পরিবারের সদস্য। সম্প্রতি রেলওয়ে কর্মচারীদের সমন্নয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানানোর পরও পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো. মুসা মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ ৫০ জন শ্রমিক মিলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ৫ দফা দাবি লিখিত আকারে জানিয়েছেন। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। তাছাড়া রেলওয়ের একজন অস্থায়ী কর্মচারী ৫ বছর চাকরি করার পর তাকে স্থায়ী করার সুযোগ আছে। অথচ রেলওয়ে গেইটম্যান পদে একজন শ্রমিক ৫ থেকে ২০ বছর চাকরি করলেও তাদের স্থায়ী তো দুরের কথা, বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধাই দেয়া হয় না।

টঙ্গী রেলওয়ে অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন  বলেন, ‘গেইটম্যানদের বেতনের ব্যাপারে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাজেট না থাকলে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ আমার কিছুই করার থাকে না। কিছুদিনের মধ্যে কর্মচারীদের বেতন দেয়া হতে পারে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. মহিউদ্দিন আরিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রেলওয়ের চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারী বিশেষ করে রেলওয়ে গেইটম্যানদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের ক্ষেত্রে চিফ ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) বাজেট প্রণয়ন করে থাকেন। দাপ্তরিক বিভিন্ন জটিলতার কারণে নিয়মিত বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/আঞ্চলিক প্রতিনিধি/এলএ)