নাটোরের দাপুটে নেতা আহাদ আলী এখন কোণঠাসা

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৭, ০৮:০৩

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস

পাঁচ বছর আগেও নাটোর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আহাদ আলী সরকার ছিলেন অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নানা অভিযোগ উঠার পর দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার ঘটনায় রাজনীতিতে অনেকটায় বেকায়দায় তিনি। 

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নানা ঘটনায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আহাদ আলী সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়। দলীয় কর্মসূচিতে অনীহা এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠার পর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে নাটোর -২ আসনে নৌকা প্রতীক পাননি আহাদ আলী সরকার। তাঁর জাযগায় মনোনয়ন পান শফিকুল ইসলাম শিমুল।

নির্বাচনের প্রায় ১১ মাস পর আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনেও কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি আহাদ আলী। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বরের এই সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু এই পদ পান আব্দুল কুদ্দুস আর সাধারণ সম্পাদক হন শফিকুল ইসলাম শিমুল।

দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর দলের রাজনীতিতেও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দলের ভেতর প্রতিপক্ষের চাপের কারণে এলাকাতেও তেমন একটা যান না। গেলেও দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকেন না।

তবে আগামী নির্বাচনে নাটোর- ২ আসন থেকে আবারও নির্বাচনে আগ্রহী আহাদ আলী সরকার। তার কর্মী-সমর্থকদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেনও তিনি। তারা কিছুটা বিরুদ্ধ পরিবেশেও আগের চেয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। আহাদ আলীর আশা, দশম সংসদ নির্বাচনে ভাগ্যের শিকে না ছিড়লেও আগামী নির্বাচনে নেত্রী তাকে নিরাস করবেন না।

আহাদ আলী সরকার রাজনীতিতে উঠে এসেছেন তৃণমূল থেকেই। ১৯৭৬ ও ১৯৮১ সালে পরপর দুইবার তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৫ সালে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯০ সালে তিনি উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ভোটেও জিতেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নাটোর-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আহাদ আলী সরকার। ওই সরকারের আমলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অর্জিত জনপ্রিয়তা কমে এই সময়ে। বিশেষ করে সরকারের দায়িত্ব পালনে এলাকায় সময় দিতে না পারা, তার কয়েকজন স্বজনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠা, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রীর যথেষ্ঠ কঠোর অবস্থান না থাকাসহ নানা কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগে অবস্থান হারান তিনি।

এক পর্যায়ে স্থানীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় আহাদ আলী সরকারের। যার কারণে দলের মনোনয়ন পাননি তিনি। আর বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মধ্যে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে সহজেই সংসদ সদস্য হয়ে যান শফিকুল ইসলাম শিমুল।

শিমুল এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আহাদের প্রভাব আরও কমে যায়। আহাদের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত অনেকেই এখন শিমুলের পাশে।

তবে দুর্দিন ঠেলে আবারও সুদিনে ফেরার আশায় আছেন চাইলে আহাদ আলী সরকার। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি তৃণমূলের রাজনীতি করে উঠে আসা নেতা। কাজ করি মানুষের জন্য। নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে কাজ করছি। এখানে কে কী বললো সেটা বিবেচনায় রাখি না। রাজনীতি জনগণের জন্যই করি, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/টিএ/ডব্লিউবি