ভৈরবকে জেলা: পক্ষে-বিপক্ষে আবার আন্দোলনের প্রস্তুতি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৭, ০৮:০৪ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭, ০৯:০০

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ থেকে

ঐতিহ্যবাহী জেলার অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে আবারও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিশোরগঞ্জবাসী। একটটি ‘মীমাংসিত’ বিষয়কে আবারও ইস্যু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। অন্যদিকে ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে আবারও আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছে ভৈরববাসী। আর ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করা হলে বাজিতপুরকে জেলা ঘোষণার জন্য বাজিতপুরবাসীও আন্দোলনে যাবে বলে জানা গেছে।

সোমবার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ভৈরব সফর করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এখানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে। এমন খবর পাওয়ার পরপরই কিশোরগঞ্জের সর্বত্রই এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। ফেসবুকে ও অনলাইনে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল আলোচনা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরপরই ভৈরবকে জেলা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালে ভৈরবে হাজি আসমত কলেজ মাঠে ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এক সমাবেশে এখানকার কৃতী সন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান ঘোষণা দেন, ‘আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে জেলা করে যাবো।’

সরকার ভৈরবকে জেলা ঘোষণার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন খবরে কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামে জেলাবাসী। একই সময়ে আন্দোলনে নামে বাজিতপুরবাসীও। তাদের দাবি, বাজিতপুরকে জেলা করার দাবি দীর্ঘদিনের। নতুন জেলা হলে সেটা বাজিতপুরই হবে। এই দাবিতে বাজিতপুরের সর্বস্তরের জনতা নৌপথ, রেলপথ, সড়ক পথসহ অবরোধ, হরতাল ও অনশন কর্মসূচি পালন করে।

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে জেলার সর্বস্তরের লোকজন কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনে নামে। তারাও এই দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে। ত্রিমুখী আন্দোলনের মুখে বিষয়টি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা কয়েক দফা আলোচনা করে স্থগিত করেন। ওবায়দুর কাদেরের ঘোষণার পর বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। কিশোরগঞ্জ জেলার তিনটি পক্ষই আবার নতুন করে আন্দোলনের কথা ভাবে।

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক ছাত্রনেতা এনায়েত করীম অমি তাঁর ফেসবুক পেইজে লিখেন, ‘আবারো কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা নিয়ে রাজনীতি। আমাদের কী অপরাধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করা হলে আবার আন্দোলনে যাবে জেলাবাসী।’ তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ঝড় বইয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য সচিব বিজয় রায় খোকা ফোরামে লিখেন, ‘কিশোরগঞ্জবাসীর একটি মীমাংসিত বিষয়কে আবারো ইস্যু বানানো হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের মানচিত্রের বুকে আবারো ছুরি চালানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিলেন ওবায়দুল কাদের। কিশোরগঞ্জবাসী অতীতে আন্দোলনের মাধ্যমে এ জেলার অখণ্ডতা বজায় রেখেছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। কিশোরগঞ্জ নিয়ে এত ষড়যন্ত্র কেন? কিছুদিন আগেও আমাদের আন্দোলনে নেমে ঢাকা বিভাগে থাকা নিশ্চিত করতে হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং সৈয়দ আশরাফের জেলা এ কিশোরগঞ্জ এটা কি কাদের সাহেব ভুলে গেলেন? আমাদের প্রাণের জেলা কিশোরগঞ্জ নিয়ে ভাবার মতো অনেক রত্ন সরকারে রয়েছেন।’ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে সোমবার ভৈরবে জিল্লুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় স্থানীয় নেতাদের বক্তৃতায় ঘুরেফিরে আলোচিত হয় জিল্লুর রহমানের সেই কথা। তারা বলেন, জিল্লুর রহমানের জীবনের শেষ ইচ্ছা ‘ভৈরব জেলা’ বাস্তবায়ন না হলে তার আত্মা কষ্ট পাবে। এ ব্যাপারে বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে ওবায়দুল কাদের তাদেরকে জেলা করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।

এ দিকে বাজিতপুরের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৈরকে জেলা ঘোষণার দাবি উঠলে তারা আবারও রাজপথে নামবেন। বাজিতপুর বাদ দিয়ে ভৈরবকে জেলা করলে তারা মেনে নেবেন না বলেও জানান।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)