সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল মেনে নেব: সাক্কু
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৭:২৮ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৮:৪১
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হলে ফলাফল মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। নির্বাচনের প্রচারে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হলেও বেশ কিছু হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকাটাইমসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাক্কু। শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করার মধ্যেই শনিবার সকালে নিজ বাসায় নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। কুমিল্লা প্রতিনিধি মাসুদ আলমকে সঙ্গে নিয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন।
ঢাকাটাইমস: সার্বিক পরিস্থিতি কেমন?
সাক্কু: নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে গত ১৫ তারিখ থেকে। সেই হিসাবে প্রচার-প্রচারণার জন্য আমরা কম সময় পেয়েছি। কারণ এখানে ২৭ টি ওয়ার্ডে প্রচারণার জন্য ২৭ দিন সময় লাগে। কিন্তু আমরা পেলাম ১৩ দিন। তারপরও আমরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছি। তাদের কাছে ভালোই সাড়া পাচ্ছি।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বড় কোন অভিযোগ আছে কি?
সাক্কু: বড় কোনো অভিযোগ কি করবো। কালকেও রোমান নামে এক কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। থানার সামনে আমাদের লোকজন সারারাত বসে ছিল, কিন্তু এখনো ছাড়েনি। গত পরশু ২৬ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার সামনে আমার পোস্টার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ২৪ নং ওয়ার্ডেও একই ঘটনা ঘটছে। ঢাকার ছাত্রলীগের নেতারা দাঁড়িয়ে থেকে আমার পোস্টার, ব্যানার নামিয়ে দিয়েছে। বলে মাথার ওপর কোনো ব্যানার থাকবে না।
নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘মিনি সেনানিবাস’ করে দেবে, কিন্তু আমরা তো সেই লক্ষণ দেখতে পারছি না। এখানে তাদের কোন নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সাইফুল হত্যা মামলার আসামিরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমাদের লোকও আসামি না, তবু তাদেরকে আটক করা হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি আছে কি?
সাক্কু: নির্বাচন কমিশন যদি শক্ত হাতে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সেনাবাহিনী বা আনসারেরও দরকার নেই। আমার কথা হল, জনগণ যেন তার ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করে ঘরে ফিরে আসতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, সেটা আমরা মেনে নেব। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নির্বাচনের দিন দেশের জনগণ দেখবে, তখন তারা মূল্যায়ন করবে।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনী ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
সাক্কু: আমার নির্বাচনী ইশতেহার সুদূরপ্রসারী। এর সব কিছুই যে এখন বাস্তবায়ন হবে তাও না। কারণ ইশতেহার থাকলে সরকারের সঙ্গে কথা বলা যায়। প্রয়োজনে সবার সহযোগিতা চাইবো। এর কিছু মেয়র নিজেই করে আর কিছু সরকারের সহযোগিতা নিয়েই করে।
ঢাকাটাইমস: কুমিল্লা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
সাক্কু: কুমিল্লার মূল সমস্যা হল যানজট এবং জলাবদ্ধতা। এটা সমাধানে সরকারেরও সহযোগিতা নিতে হবে।সরকারেরও আমাদের সহযোগিতা করেতে হবে। যানজট নিরসনে গত দুইমাস আগে মোটরচালিত পাঁচ হাজার রিকশা উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সব কিছু উঠিয়ে দিলে তো লাভ হবে না, মানুষের জীবন-জীবিকার কথাও চিন্তা করতে হবে। আবার জনগণের চলাচলের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। নির্বাচিত হলে আমি সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবো। তাদের সঙ্গে বসে সিএনজি চলাচল একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসবো। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মালিক শ্রমিকদের অংশগ্রহণ থাকবে। সিটি করপোরেশন তাদের সাহায্য করবে।
তবে জলাবদ্ধতা হুট করেই নিরসন হবে না। কারণ শহরের পশ্চিম দিকে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত আমাদের পানি নিষ্কাশন করা যায়। দক্ষিণ দিকে কিছুটা পানি নিষ্কাশন করা যায়। কিন্তু উত্তর ও পূর্বপাশে পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা নেই। কারণ উত্তর পাশে গোমতি নদী শহরের তুলনায় ১০ ফুট উঁচু, আর পূর্বদিকে ভারতের সীমান্ত। আবার এই পথগুলো ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে।
আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ড্রেজার মেশিনসহ বিভিন্ন মেশিন ক্রয় করে খাল খননের কাজ করেছি। পর্যায়ক্রমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। গোমতি নদীতেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো।
ঢাকাটাইমস: যে কাজগুলো করতে পারেননি?
সাক্কু: আমি বিরোধী দলের সমর্থনে মেয়র হয়েছিলাম কিন্তু জনগণের স্বার্থে স্থানীয় দুই সংসদের (পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বলেছি, আমি এই সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে পারি, আপনারও তো এ সংসদীয় আসনের জনপ্রতিনিধি। আজ আমি জনগণের মুখোমুখি হচ্ছি, কাল আপনাদেরও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে, জবাবদিহিতা করতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সরকার থেকে আমি ৩৭৯ কোটি টাকার কাজ এনেছি। যা দিয়ে আমার সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন হয়েছে। এটা আমার টাকা না, তবে প্রক্রিয়া কিন্তু করেছে সাক্কু। তবে প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলাম। অনেক পরিকল্পনা ছিল, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আগামীবার মেয়র নির্বাচিত হলে সেগুলো করবো।
ঢাকাটাইমস: বিএনপিতে দ্বন্দ্বের কথা শোনা যাচ্ছে…
সাক্কু: কুমিল্লায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে তা ২০১৪ সালেই শেষ হয়ে গেছে। ম্যাডামের জনসভার পর। কুমিল্লা শহরে দলীয় কোন প্রোগ্রামই আমরা আলাদা আলাদাভাবে করি না। আর আমি এবার তো ধানের শীষের প্রার্থী। এখানে দলের নেতারা আমাকে পছন্দ না করে থাকেও ধানের শীষের কারণে দলের জন্য কাজ করছে।
ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাক্কু: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।