‘অনুদান দিলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না’

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০১৭, ১৫:০৭ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭, ১৭:৩৩

মাহমুদ উল্লাহ, ঢাকাটাইমস

বাণিজ্যিক ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করছেন এই সময়ের আলোচিত চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘাসফুল’ দর্শকদের ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। একটি পরিচ্ছন্ন ছবি ছিল ঘাসফুল। আশি নব্বই এর মফস্বলের সাংস্কৃতিক রুচিবোধ সম্পন্ন একজন নারীর মানসিক যন্ত্রনার কথা সে ছবিতে ফুঁটে উঠে। এবার তৈরি করলেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘খাঁচা’। দেশভাগ নিয়ে বাস্তবধর্মী এই চলচ্চিত্র দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় এই ‍গুণী নির্মাতার সঙ্গে। তিনি অনুদান চলচ্চিত্রের প্রসারে সরকারের দায়িত্ব ও দর্শক তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ

আপনার নতুন চলচ্চিত্র ‘খাঁচা’ নিমার্ণের কোন পর্যায়ে রয়েছে?এই ছবি কবে মুক্তি পাবে?

সাত আটদিনের মধ্যেই ছবিটির ফাইনাল কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর এর প্রচারণার জন্য ট্রেলারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে ভাববো। মে মাসে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ছবিটি তৈরি করতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন কী না? হলে সেগুলো কি?

যেই ছবি মানুষের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, সেই ছবি তৈরি করতে একটু কষ্ট তো হবেই। যেই ছবি বহু বছর মানুষের চিন্তার খোরাক যোগাবে, এমন ছবি খুব কম নির্মাণ হয়, ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকে।একসময় চলচ্চিত্র আন্দোলন হতো। এখন সেসব অনেক কমে গেছে। শিল্পরুচি সম্পন্ন দর্শক তৈরি করতে হলে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সবাইকেই কাজ করে যেতে হবে। ভালো দর্শক আসলে তৈরি হতে হয়। এই ধরনের শিল্পের দিকে সরকার ও সমাজের যে সহযোগিতা থাকার দরকার ছিলো তা না থাকার কারণে এটা একটি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা হয়ে গেছে। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্তমান সমাজে এই ধরনের চলচ্চিত্র নিমার্ণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

বর্তমান সময়ে দেশের যে অবস্থা। তা শুধুমাত্র আইন দিয়ে বিচার করা ঠিক হবে না। সাহিত্য ও শিল্প সংস্কৃতি দিয়েই সমাজের এই কলুসিত দিক দূর করতে হবে। বর্তমান এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক শূন্যতাই এর জন্য দায়ী। চিন্তার খোরাক, ধমার্ন্ধতা, নারীর প্রতি সহিংসতা, রাষ্ট্রের প্রতি উদাসীনতা, জাতীয় সম্পদের প্রতি কোন ধারণা না থাকার কারণে। রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মানুষ তৈরি হচ্ছে না। ইতিহাসের ভেতরের ইতিহাস যে থাকে তা বুঝতে হলে শিল্পরুচিবোধ সম্পন্ন মানুষের কোন বিকল্প নেই। এই জন্যই এই ধরনের শিল্পের আরও বেশি বেশি প্রয়োজন।  

আপনার ঘাসফুল চলচ্চিত্রও অনেক ভাবনার খোরাক জোগায়, সেই বিষয়ে কিছু বলুন।

আমি ঘাসফুলে দেখিয়েছি একজন নারী বিয়ের আগে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তারপর তার মানসিক সময়টাই আমি চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আশি,নব্বইয়ের দশকে মফস্বল শহরে শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক অনেক পরিবার ছিল। এরকমই একটি পরিবারের গল্প আমি ঘাসফুলে বলার চেষ্টা করেছি।

চলচ্চিত্রে অনুদান দেয়া ছাড়াও ভালো মানের ছবি তৈরিতে সরকার কী ভূমিকা রাখতে পারে?

টাকা অনুদান দেওয়ার সরকারের যে উদ্দেশ্য সেটা পূরণ করতে হলে আরো দায়িত্ব থেকে যায়। দেশের ৬৪টি জেলার শিল্পকলায় টিকিটের মাধ্যমে এসব ছবি দেখানোর চেষ্টা করা উচিত। বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে প্রদর্শনের চেষ্টা করা উচিত। বিভিন্ন টিভিতে স্বত্ব বিক্রি করারও চেষ্টা করা উচিত। মোট কথা একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান একটি ছবিকে যেভাবে প্রচার প্রচারণা করে তা থেকে বাণিজ্য উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে,সরকারিভাবেও সেরকই একটি প্যাকেজ প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত। তাহলে অনুদানের যে উদ্দেশ্য তা সফল হবে। দর্শক তৈরিও তাদের একটি কাজ। আমাদের সরকারের উচিত দশর্ক তৈরিতেও মনোযোগ দেয়া। শুধুমাত্র অনুদান দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

এই ধরনের সিনেমা তৈরিতে আর কী ধরনের সহযোগিতা দরকার বলে আপনি মনে করছেন?

কর্পোরেট লেভেলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক একটি দায়িত্ব থাকে। তাদেরও উচিত এসব সিনেমায় লগ্নী করা। এটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে করতে হবে। দেশের সাহিত্য সংস্কৃতিকে প্রসারের জন্য, দেশের মানুষের রুচিবোধ বৃদ্ধি করানোর জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজর দিতে হবে। আমাদের সিনিয়র নির্মাতাদেরও এই জায়গাগুলো নিয়ে আরো কথা বলা উচিত।

ছবির বাজেট নিয়ে কিছু বলুন।

আমরা কিন্তু শূন্য বাজেটে কাজ করছি। কারণ অন্যান্য দেশের একজন স্টারের বাজেটও এরচেয়ে কম। এই টাকা তোলার জন্য অনেক দর্শক প্রয়োজন নেই। অল্প কিছু দর্শকই একটি ছবি দেখলে এই টাকা উঠে আসবে। তাই সেই দর্শকটাই আমাদের তৈরি করতে হবে।

আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

ঘাসফুল এর পরই আমি খাঁচা বানিয়েছি। মাঝে খুব বেশি সময় নেইনি। এখন একটু ভাবার জন্য সময় নিতে চাই। তাও খুব বেশি সময় নয়। কোন বিষয় আমার মধ্যে তাগাদা দিচ্ছে, সেটা ভেবে বের করেই পরবর্তী কাজ করবো।

খাঁচা নিয়ে শেষ কথা বলুন।

হাসান আজিজুল হক আমার প্রিয় লেখক। সিনেমাটি যারা দেখবে তাদের যদি ভালো সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা থাকে। তাহলে তাদের এই সিনেমাটি ভালো লাগবে। একটি পরিবারের ভেতর থেকে দেশভাগকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। দেশভাগ যে খুব সাধারণ কোন ঘটনা নয় তাদের সেই মানসিক যন্ত্রনা দেখেই ইতিহাসের ভেতরের ইতিহাস বোঝা যাবে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকে ও ঢাকাটাইমসকেও অনেক ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/এজেড)