২৮ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৪:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন না করায় আরও ২৮টি ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) থায়রয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল মঞ্জুর করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই ২৮টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে একই বেঞ্চ। একইসঙ্গে এসব ওষুধ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধে ৭২ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের মহাপরিচালক, ওষুধ উৎপাদন মালিক সমিতির সভাপতি, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

২৮টি কোম্পানি হলো- অ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেঙ্গল টেকনো ফার্মা লিমিটেড, বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডিসেন্ট ফার্মা লিমিটেড, ডা. টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্রীনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ম্যাক্স ড্রাগস লিমিটেড, ম্যাডিমেট ল্যাবোরেটরিজ লিমিটেড, মর্ডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিসটিক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, অর্গানিক হেলথকেয়ার লিমিটেড, ওয়েস্টার ফার্মা লিমিটেড, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হোয়াইট হর্স  ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মমতাজ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিাইটেড কেমিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ইউনিট-১, ইউনিট-২, ইউনিট-৩।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এ রিট আবেদন করে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অমিত তালুকদার।

নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগ এনে জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুমতিক্রমে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে এই ২৮টি কোম্পানির  উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনস্বর্থে এই রিট আবেদনটি করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

আইনজীবী মনজিল মরসেদ বলেন, ওষুধের মান ঠিক রাখতে উৎপাদন পদ্ধতি, লোকবল, ফ্যাক্টরির অবস্থান, পদ্ধতি, প্যাকেট, বোয়িংসহ অনেক বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে জিএমপি নীতিমালায়। এ নীতিমালাটি আমাদের দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা স্বীকৃত। ফলে জিএমপি লঙ্ঘন করে ওষুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা জিএমপি (গুড মেনুফ্যাকটরি প্র্যাকটিস) অনুসরণ না করে এই ২৮টি কোম্পানি নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক, থায়রয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

রিট আবেদনে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ উদ্বৃত করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশের ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন করবে।

আবার ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ওষুধ কোম্পানি জিএমপি অনুসরণ না করে তবে সে সব কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল অথবা সাসপেন্ড করা যেতে পারে। অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, মজুদ, অথবা বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক একলাখ টাকা জরিমানাসহ শাস্তি অথবা উভয় দণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ২০টি কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির সকল ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনও বন্ধে রায় দিয়েছে। মানসম্মত ওষুধ উৎপন্ন না করায় এ সকল কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।

উৎপাদন বাতিল হওয়া আগের ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

(ঢাকাটাইমস/০৪ এপ্রিল/এমএবি/জেডএ)