কদমা, বাতাশা তৈরিতে ব্যস্ত সাটুরিয়ার বণিক পরিবার

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১৭

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ

গ্রাম-বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। গ্রাম-বাংলার এই মেলাকে সামনে রেখে চিনি ও আখের গুড় দিয়ে তৈরি কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনার সাজ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারার বণিক পরিবার।

ওই এলাকায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের হাতের তৈরি এসব সাজ জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাবে টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বৈশাখ মেলায়।

শুক্রবার সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারা এলাকায় গিয়ে কথা হয় এই পেশার সাথে জড়িত সতীশ বণিকের সাথে। তিনি বলেন, এই পেশায় তিনি ৩০ বছর ধরে আছেন। এর আগে এ পেশায় জড়িত ছিল সতীশ বণিকের বাপ ও দাদা। সতীশ তাদের পূর্বপরুষের এই শিল্পকে ধরে রাখতে নিজ বাড়িতে চিনি ও আখের গুড় দিয়ে তৈরি করছেন- কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনার সাজ।

তিনি বলেন, এই পেশায় বছরের বারো মাস কাজ না থাকলেও শুধুমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজ বাড়িতে এ কাজ করছেন শ্যামল বণিক, গোবিন্দ বণিক, প্রদীপ বণিকসহ হাতে গোনা সাত-আট জন।

একই গ্রামের প্রদীপ বণিক বলেন, কদমা, বাতাশাসহ বিভিন্ন ধরনের সাজ বানাতে প্রথমে গরম চুলায় হাড়িতে পানির সাথে সম-পরিমাণ চিনি অথবা আখের গুড় মিশিয়ে জ্বাল করতে হয়। এরপর চিনি, গুড় জ্বালের মাধ্যমে সাজের উপযোগী হলে কাঠের ডাইচের ভেতর ঢালতে হয়। কিছুক্ষণ পর কাঠের ডাইচের ভেতর সাজ শুকিয়ে তৈরি হয় হাতি, ঘোড়া, আম, কাঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা।

সরেজমিনে গিয়ে বণিক পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় মানিকগঞ্জে এই পেশায় শতশত পরিবার জড়িত থাকলেও ভাটারা এলাকায় বর্তমানে মাত্র আটটি পরিবার আছে। নানান কারণে অন্য পরিবারগুলো ভিন্ন পেশায় চলে গেছে।

তারা বলেন, বছরের নয় মাস কাজের কোন চাপ থাকে না। সামনে পহেলা বৈশাখ, এ জন্য এখন তাদের দম ফেলানোর সময় নেই। এই ব্যস্ত সময়ে পুরুষদের সাজ বানাতে সাহায্যে করছেন বাড়ির নারীরাও। কিছুদিনের মধ্যে এখানকার তৈরি চিনি, গুড়ের সাজ জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাবে নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বৈশাখ মেলায়।

সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। তা না হলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে পড়বে গ্রাম-বাংলার চিরচেনা এই শিল্প।

তিনি বলেন, চিনি, গুড় দিয়ে তৈরি কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের সাজ এখনো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করে। এ কারণে বণিক পরিবারের যে কোন সমস্যায় তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)