ময়মনসিংহে নিরাপদ পালকি থেকে মারণযান পালকি

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১২:০৫

মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে এক সময় মাঠ-ঘাট-প্রান্ত পেরিয়ে নিরাপদ বাহন পালকিতে চেপে চলত বউ। সেই পালকি এখন সড়ক-মহাসড়কে। এ পালকির যাত্রী আবাল থেকে বৃদ্ধ।

দুই-তিন বছর আগে ভারত থেকে আমদানি করা নিটোলের বাজারজাত করা এই পালকি নামের পরিবহনটির সংখ্যা ময়মনসিংহে এখন দেড় শতাধিক।

পালকির মালিক-চালক সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে তিন লাখ টাকা জমা দিলেই পাওয়া যায় পালকী। বর্তমানে নগদে প্রতিটি পালকির দাম সাড়ে ৯ লাখ টাকা হলেও কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।

অপরদিকে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন যুগের পালকি এখন শুধুই গল্প।

জানা যায়, হুম না, হুম না বলে মাঠ কাঁপিয়ে পালকির সে গানও আজ বিস্মৃত। অনভ্যাসে পালকি বাহকরাও ভুলতে বসেছেন তাদের নিজস্ব ঘরানার সে গানের কথা ও সুর।

পালকির সেই চাহিদা আর নেই। গ্রামে তৈরি হয়েছে রাস্তা। পৌঁছে গেছে চার চাকার আধুনিক পালকি নামের এ গাড়ি।

পুরনো পালকিওয়ালারা গান বাঁধতেন, ‘কর্তাবাবুর রঙটি কালো/গিন্নি মায়ের মনটি ভাল/সামলে চলো হেঁইও।’ আবার কর্তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার সময় বাইকেরা গাইতেন, ‘হেঁইও জোয়ান, সরু আল, চলো ধরে। কর্তাবাবুর, দরাজ দিল, দেবে ধরে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ সড়ক-মহাসড়কে পালকি নামের এই যানের অধিকাংশ চালক শিশু-কিশোর।

অভিযোগ, স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়া পালকিগুলি চলছে ময়মনসিংহ শহর, মুক্তাগাছা, রসুলপুর, অষ্টধর, পিয়ারপুর ও বিদ্যাগঞ্জ, কাঠবওলা, রসুলপুরসহ বিভিন্ন সড়কে।

আনাড়ি চালকদের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা সড়কের ঘুন্টি রেল ক্রসিংয়ে চলন্ত ট্রেনে এসে ধাক্কা খায় একটি পালকি। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হন।

অপরদিকে চলাচলরত এসব রাস্তায় গড়ে তোলা হয়েছে কমপক্ষে ৬টি অবৈধ স্ট্যান্ড। পালকির অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে ঘটছে প্রচণ্ড যানজট।

আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সূত্রে জানা গেছে, এক সভায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন ব্যস্ততম ওই সড়ক থেকে অবৈধ পালকির স্ট্যান্ড অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই নির্দেশ আজ উপেক্ষিত। তারপরও চলছে মারণযান পালকি।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/ব্যুরো প্রধান/এলএ)