মাছ বাঁচাতে ত্রিশ পরিবারকে পানিবন্দী!

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০৭:৫৭ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ১০:৪৭

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

তিনি একজন ‘প্রভাবশালী’, তাই নিজের স্বার্থের জন্য কম করে হলেও ত্রিশটি পরিবারকে মাস তিনেক পানিবন্দী করে রেখেছেন। শরীফ নামের এই ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি নিজের মৎস্য প্রকল্পের রেনু বাঁচাতে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কয়েকশ মানুষকে। সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গার খেজুরটেক এলাকায় এমন করেই জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছেন শরীফ।

জানা গেছে, সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি শরীফ। মাছ চাষ করেছেন নিজের এক'শ শতক জমিতে। পাশেই বিশাল মার্কেটেরও মালিক এই শরীফ। মানুষের ঘরের ব্যবহৃত পানি নাকি কালভার্ট  হয়ে তার পুকুরে এসে পড়ে এবং এতে নাকি তার মাছের রেনু নষ্ট হবে!। তাই নিজের লাভের কথা ভেবে তিনি এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ একমাত্র কালভার্টটির ছিদ্র আটকে দিয়েছেন ঢালাই করে!

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালভার্ট দিয়ে পানি না সরায় বন্দী হয়ে পড়েছে খেজুরটেক এলাকার প্রায় ত্রিশটি পরিবার। শরীফ প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবগত করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।  

পানিবন্দীর কারণে চরম অসহায়ত্ব ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে পরিবারগুলো। বাড়িগুলোতে জমে আছে প্রায় হাঁটু পানি। রান্না ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ডুবে গেছে চুলাও। তাই রান্না বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুটি ও কলা খেয়ে দিন পার করছেন তারা। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। জলাবদ্ধতার কারণে বৃদ্ধ ও শিশুরা পড়েছে বেশী বিপাকে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ।

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত তিন মাস যাবৎ তার বাড়িসহ আশপাশের প্রায় ত্রিশটি বাড়ির লোকজন পানিবন্দী রয়েছেন। এলাকার প্রভাবশালী শরীফ গায়ের জোরে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টটি আটকে দিয়েছেন। এতে পানিবন্দী হয়ে এতগুলো মানুষ মানবেতর দিন পার করছে তাতে শরীফের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আছে তার মাছ বাঁচানো নিয়ে।

ভুক্তভোগী পরী বানু নামে এক বাড়ির মালিক জানান, জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না তারা। গোসল, রান্না ও সন্তানদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া রাত হলেই পোকামাকড়ের আতঙ্কে কেউ ঘুমুতে পারেনা। এহেন পরিস্থিতিতে অনেকবার জনপ্রতিনিধিদের অবগত করা হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কোনো ফল মেলেনি। তাই যত দ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তারা।

জলাবদ্ধতার কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এমন একজন হলেন জামাল মিয়া নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। জামাল মিয়ার বাড়ির সাতটি কক্ষের সব গুলোতেই উঠেছে পানি। মোটর কিনে দিন-রাত পানি সেচে কুল পাচ্ছেন না জামাল। শেষমেষ বাড়ির ভাড়াটিয়ারাও জলাবদ্ধতার কারণে ভাড়া নেয়া কক্ষগুলো ছেড়ে গেছে।

জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে যিনি মানুষের ভোগান্তি তৈরি করেছেন সেই প্রভাবশালী শরীফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এলাকার মানুষের ব্যবহারের পানি আমার রেনুর প্রজেক্টে পড়লে রেনু মারা যাবে। তাই কালভার্টের ছিদ্র ঢালাই করে আটকে দিয়েছি। আর ওনাদের অনেকবার বলেছি যে আপনারা পানি নিষ্কাশনের অন্য কোনো ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এতে আমার দোষ কিসে?

তবে সরকারী অর্থে নির্মিত পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালাভার্টটির ছিদ্র তিনি কোন অধিকারে আটকে দিয়েছেন এমন প্রশ্নে শরীফ বলেন, সরকারী অর্থে কালভার্টটি নির্মিত হলেও কেবল তাদের ক্ষেতে পানি সেচের কারণে একসময় এটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। তাই এটি তিনি বন্ধ করতেই পারেন। এরপর ফোন রেখে দেন শরীফ।

জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর সমস্যা কেন এত দিনেও সমাধানের কোন চেষ্টা করা হয়নি এমন প্রশ্নে ঢাকাটাইমসকে দায়সারা জবাব দেন স্থানীয় মেম্বার আবুবক্কর সিদ্দিক বাক্কা।

এদিকে জলাবদ্ধতার সংবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ঐ এলাকা পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তা বিকাশ বিশ্বাস।

এই কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জলাবদ্ধতায় মানুষের ভোগান্তির চিত্র দেখেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবগত করা হলে তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/এপ্রিল ২৫/প্রতিনিধি/এসএএফ