পুলিশের দখলে নীলক্ষেতের ফুটপাত!

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৪:৫০ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীতে যখন ফুটপাত দখলমুক্ত করার চেষ্টা চলছে তখন নিউমার্কেট থানার পুলিশ দখল করে বসে আছেন নগরবাসীর হাঁটার পথ, ফুটপাত। থানার সামনের এবং আশপাশের ফুটপাতের অর্ধেকের বেশি দখল করে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে রেখেছে বেশ কিছুদিন ধরে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, থানার পাশেই বহুতল বিশিষ্ট পুলিশ কোয়ার্টারের আগ থেকে গাউসুল আজম মার্কেট পর্যন্ত ফুটপাত বাঁশ ও দড়ি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আর মাঝখানে এলোপাতাড়ি রাখা হয়েছে নানা রকম ময়লা-আবর্জনা। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এ ফুটপাত কী কারণে নিউমার্কেট থানা কর্তৃপক্ষ দখল করে জনসাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তা বলতে পারে না পথচারীরা। তাদের প্রশ্ন, পুলিশ কি পারে এভাবে একটা বহুল ব্যবহৃত ফুটপাত বন্ধ করে দিতে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির উল্টোপাশের এ ফুটপাত নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, গাউসুল আজম মার্কেট, কাঁটাবন, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ ব্যবহার করে। বিশেষ করে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত হয়ে গাউসুল আজম মার্কেট, কর্মজীবী নারী হোস্টেল এবং সংলগ্ন বিবিধ এলাকায় যেতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নারী এবং শিশুরা খুব সমস্যায় পড়ছে।

ফুটপাত হারিয়ে মানুষ চলাফেরা করছে গাড়ি চলাচলের রাস্তার ওপর দিয়ে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল বেশ কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। নীলক্ষেত-কাঁটাবন নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি, দ্রতগামী যান বাহন এবং রিকশার ভিড়ে ফুটপাত ছাড়া মানুষ বেশ বিপাকে পড়েছে। মানুষ না পারছে মূল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে, না পারছে ফুটপাত ব্যবহার করতে। এমনিতেই নীলক্ষেত-গাউসুল আজম এলাকার ফুটপাত বইসহ নানা পণ্য সামগ্রীর হকাররা দখল করে থাকে সারাবছর। তার ওপর পুলিশ থানার সামনে এই ফুটপাত দখল করে রাখায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ভুক্তভোগীরা ভেবে পাচ্ছেন না, কীভাবে এই ফুটপাত পুলিশ দখল করল আর কীভাবেই এর থেকে মুক্তি হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ থাকেন নিউমার্কেট এরিয়ায়। নানা কাজে তাকে নীলক্ষেত, গাউসুল আজম মার্কেটে আসতে হয়। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘একটা সভ্য রাষ্ট্রে পুলিশ এভাবে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করতে পারেনা। যেখানে মেয়ররা ফুটপাত মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, সেখানে রাষ্ট্রের অন্যতম ভরসা বাংলাদেশ পুলিশের একটি ইউনিট কীভাবে ফুটপাত দখলের মত কাজ করতে পারে? মানুষ এ থেকে কী বার্তা পাবে? এমনিতেই পুলিশের বিষয়ে মানুষের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে’।

৭১ টিভির সাংবাদিক মাহবুব স্মারক থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। নিউমার্কেট থানা কর্তৃক ফুটপাত দখলের ঘটনায় হাজারো ভুক্তভোগীর তিনিও একজন। উপায় না দেখে ফেসবুকেই নিজের কষ্ট ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ব্যস্ত ফুটপাত বন্ধ করে দিয়েছে নিউ মার্কেট থানা...নাটক সিনেমায় মিয়া বাড়ির রাস্তায় জুতা পায়ে হাঁটা যেতো না। জুতা হাতে নিয়ে তবেই চলতে হতো। রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার সামনের অবস্থা তার চেয়ে করুণ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ব্যস্ত নীলক্ষেত মোড়েই ফুটপাতটি। এ মোড়েই অবস্থান নিউ মার্কেট থানার। সেই থানার সামনে ফুটপাতটি দড়ি টেনে, ব্যারিকেড ও আবর্জনা ফেলে বন্ধ করা হয়েছে বেশ কিছু ধরে। কিন্তু হাজারো মানুষের চলার এ ফুটপাত ব্যবহারে থানা পুলিশের কেন আপত্তি? ফুটপাতটি সবার চলাচলের জন্য আবারো উপযোগী করে দিলে বুঝবো... পুলিশ সত্যিই জনগণের বন্ধু’।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘থানার নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হয়েছে। আগে আমাদের থানার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত এক মাস ধরে ফুটপাতটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালেও ফুটপাতটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে তা আবার খুলে দেওয়া হয়। এবারও সময়মত খুলে দেয়া হবে।

পথচারীদের অসুবিধার কথা বলা হলে ওসি আতিকুর রহমান বলেন,‘আমাদের থানার সামনে কোনো দোকান নেই। তাই চলাচল করতে অসুবিধা হওয়ার হওয়ার কথা নয়।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

ঢাকাটাইমস/এপ্রিল ২৬/এসএএফ/এমআর