ভাই-ভাতিজাকে ফাঁসাতে মেয়েকে অপহরণ নাটক মায়ের!

প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৫৪

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

সাড়ে তিন বছরের মেঘলা জানে না তার মা-বাবা তাকে হত্যা করার জন্য অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন। অন্যকে ফাঁসাতে এভাবে এই নিষ্পাপ শিশুকে ব্যবহার করবেন কেউ ধারণা করতে পারেনি। মেঘরা পুলিশের কোলে থাকলেও তার একটি হাত পরম মমতায় মায়ের হাত স্পর্শ করে আছে। সে যদি বুঝতো মা তাকে নিয়ে জঘন্য খেলা খেলছেন তাহলে মেঘলার হাত মায়ের হাতে থাকতো না। সেই মা হলেন বগুড়া শহরের ফুলদীঘি এলাকার নিলুফা শারমিন রিতা (৩৫)। এখন গ্রেপ্তার হয়ে তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন।

জানা যায়, পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে ভাই ও ভাতিজাদের ফাঁসাতে অপহরণ নাটক সাজাতে চেয়েছিলেন রিতা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন দ্বিতীয় স্বামী ও ছেলের সহযোগিতায় সাড়ে তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিজেই লুকিয়ে রাখেন। পরে পুলিশ ওই নারী, তার দ্বিতীয় স্বামী ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানান পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শনিবার দুপুরে বগুড়া শহরের ফুলদীঘি এরাকার নিলুফা শারমিন  রিতা নামের এক নারী শাজাহানপুর থানায় অভিযোগ করেন তার সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা মেঘলা মানতাসা নকসীকে কে বা কারা অপহরণ করেছে। তিনি পুলিশকে জানান, শনিবার বেলা ১১টায় তিনি মেয়েকে আনতে  ফুলদীঘি মডেল কিন্টার গার্ডেন স্কুলে যান। মেয়েকে স্কুলের মাঠে রেখে পরিচালকের কক্ষে কিছু সময় কাটানোর পর বাইরে এসে দেখতে পান তার মেয়ে স্কুল মাঠে নেই। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশি তৎপরতায় শনিবার রাত ১১টায় শিশুটিকে কে বা কারা ফুলদীঘি এলাকায় রিতার বাবার বাড়ির সামনে রেখে যায়। পরে পুলিশ শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসে। অপহরণের ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অভিযোগকারী নিলুফা শরমিন রিতা ও তার ছেলে ফাহিম নুরে আলমকে (১৩) থানায় নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে রিতা পুলিশকে সাজানো অপহরণ নাটকের পুরো বর্ণনা করেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, সাত বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ের পর রিতা তার প্রথম পক্ষের ছেলে ফাহিম নুরে আলমকে নিয়ে বাবার বাড়ি শহরের ফুলদিঘিতে বসবাস শুরু করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী মিঠু আহম্মেদ ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বাবার বাড়িতে বসবাস করতে গিয়ে ভাই ও ভাতিজাদের সাথে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে তাদেরকে ফাঁসাতে তিনি স্বামীর সাথে পরামর্শ করে নিজের শিশুকে দিয়ে অপহরণ নাটক সাজান।

রিতা জানান, সেই অনুযায়ী তার স্বামী মিঠু আহম্মেদ শনিবার সকালে ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসে বাসায় না গিয়ে শহরের একটি পার্কে বসে থাকেন। রিতা তার মেয়েকে  স্কুল থেকে নিয়ে ছেলে ফাহিমের মাধ্যমে শহরের পৌর পার্কে পাঠিয়ে দেয়। এরপর শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা দুপচাঁচিয়া উপজেলার বেড়াগ্রামের শিশুটির খালা ছবি বেগমের বাড়িতে রেখে আসে। পুলিশের তৎপরতায় রাত ১১টার দিকে খালা ও খালু গোপনে শিশুটিকে বগুড়ায় এনে বাসার সামনে রেখে পালিয়ে যান। রিতার স্বীকারুক্তির পর পুলিশ তার স্বামী মিঠু আহম্মেদ ও ছেলে  ফাহিম নুরে আলমকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় শহরের কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আজিজ মন্ডল বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)