বৃদ্ধ ‘খুন’: এসআইয়ের নাম থাকায় মামলা নেননি ওসি

প্রকাশ | ০১ মে ২০১৭, ১৯:৫৩

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে দেলদুয়ারে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তিতে সানা মোহন ঘোষ নামে ৭২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চৈতন্য রায় নামে একজনের সঙ্গে সানা মোহনের ধস্তাধস্তির সময় দেলদুয়ার থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াছিন আরাফাত সানাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপরই গায়ে আঘাত পেয়ে তিনি মারা যা। 

রবিবার বিকেলে উপজেলার পাথরাইলে এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টাতেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি নিহতের স্বজনরা। সোমবার সকালে নিহতের স্ত্রী দুলালী ঘোষ বাদী হয়ে চৈতন্য রায়, নিখীল সরকার, অনন্ত রায় ও দেলদুয়ার থানার এসআই ইয়াসিন আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। কিন্তু এসআইয়ের নাম দেখে দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। 

নিহতের ছেলে দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, এসআইয়ের নাম উঠিয়ে নিলে মামলা নেওয়া হবে। এমনকি চৈতন্য শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করবেন বলে দেলদুয়ার থানার ওসি তাদেরকে জানিয়েছেন। মে দিবসের বন্ধ থাকায় আদালতেও মামলা করতে পারেনি তারা। মঙ্গলবার আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান দীলিপ। 

সানা মোহন ও চৈতন্য রায়ের সাথে কিছুদিন ধরেই রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। নরেন্দ্র ঘোষের ছয় শতক জমি কেনন চৈতন্য রায়। এ ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, এক হাত বরাবর রাস্তা থাকবে। নরেন্দ্র ঘোষ এক হাত রাস্তাও দিয়েছেন। চৈতন্য বর্তমানে নরেন্দ্র ঘোষের বড় ভাই সানা মোহন ঘোষের কাছে গাড়ি প্রবেশের মতো অতিরিক্ত জায়গা দাবি করায় বিরোধের সূত্রপাত। এদিকে এক হাতের বেশি জায়গা রেখে সানামোহন ঘোষ বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন।

এর ধারাবাহিকতায় রবিবার দুপুরে দেলদুয়ার থানা পুলিশ ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌসসহ বেশ কয়েকজন লোক জায়গাটি পরিদর্শণে বা বিরোধ মীমাংসা করতে ঘটনাস্থলে আসেন। আলোচনার এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সীমানা প্রচীর ভাঙতে গেলে একপর্যায়ে সানামোহন বাঁধা দিলে চৈতন্য ও সানামোহনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে এসআই ইয়াছিন আরাফাত ধাক্কা দিলে সানা মোহন ঘরের দেয়ালে লেগে পড়ে যান। পরে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

সোমবার মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে বাড়িতে আনলে বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে শোকের মাতম সৃষ্টি হয়। এদিকে হত্যার অভিযোগে চৈতন্য রায় তার পরিবার নিয়ে ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।

নিহতের নাতি বিপ্লব ঘোষ অভিযোগ করেন, দুই মাস ধরে তাদের প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে নিহত সানা মোহনের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন এসআই আরাফাত। ঘটনার দিনও সকালে বিপ্লবকে তিনি বলেন, ‘তোর বাপেরে চিনে রাখিস। আমি প্রশাসনের লোক। তোর নাম মার্ক করে রাখলাম।’

ঘটনার দিন রবিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম খান, টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হোসেন ভূইয়া, দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
 
এসময় নিহতের স্বজনরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন যে, দেলদুয়ার থানার এসআই ইয়াছিন আরাফাতের সহযোগিতা ও তার সাহসেই সানা মোহনকে ‘খুন’ করা হয়। 

আসলাম খান তখন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে ধু¤্রজালে পড়েছি। আমরা চৈতন্য ও এসআই ইয়াসিন আরাফাত উভয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে যেই অপরাধি হোক তাকেই আইনের আওতায় এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসআই ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধে কেন মামলা নেয়া হয়নি-জানতে দেলদুয়ার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশররফ হোসেনের সরকারি নম্বরটিতে বারবার রিং করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। 

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটা ধাক্কাতে মানুষ মরতে পারে না। ময়নাতদন্ত শেষে দেখা যাবে সে স্ট্রোক করে মার গেছে কিনা। যদি অভিযুক্ত এসআই আরাফাতের আঘাতে সানা মোহনের মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে এসআইসহ মামলা নেওয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/০১মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি