বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জলহস্তী শাবকের জন্ম

প্রকাশ | ০৭ মে ২০১৭, ১৭:২১ | আপডেট: ০৭ মে ২০১৭, ১৭:৪২

আবুল হাসান, গাজীপুর
ফাইল ছবি

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জম্ম নিয়েছে নতুন জলহস্তীর শাবক। নতুন এ বংশধর জন্ম নেয়ায় খুশি এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এখনো শাবকটি রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের চোখের আড়ালে।

গত ২ মে পার্কের জলহস্তীর জলাশয়ের পানিতেই তার জন্ম হয়। এনিয়ে জলহস্তী পরিবারে সদস্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার-এ।

পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সারোয়ার হোসেন খান ঢাকাটাইমসকে জানান, জন্মলাভের পর পানিতে মায়ের সাথেই সাঁতরে বেড়াচ্ছে জলহস্তী শাবক। পার্ক কর্তৃপক্ষের চেয়ে বাচ্চা নিয়ে তার মা খুবই সজাগ। একটু সময়ের জন্যও যেন বাচ্চাটি চোখের আড়াল না হয় সর্বদা এমন তীক্ষœ দৃষ্টি মায়ের তার প্রতি।

ওই জলাশয়ের পাশে অপরিচিত কেউ তাদের কাছে যেতে পারছে না। এমন কেউ তাদের দিকে গেলেই বাচ্চা ফেলে রেখেই তেড়ে আসে মা হস্তী। মা তার বাচ্চাটিকে সবসময় আগলে রাখছে। তাদের সাথে সেখানে বাবা জলহস্তীটিও অবস্থান করছে।

তবে বাবাকেও বাচ্চার কাছে বেশি ভিড়তে দিচ্ছে মা হস্তী। বেশির ভাগ সময়েই বাচ্চাটি পানির নিচ থেকে শুধু মার্বেলের মত দুইটি চোখ বের করে মায়ের কাছে অবস্থান করতে দেখা যায়।

বাচ্চাটি মাঝে মধ্যে কিছু সময়ের জন্য ভাসলেও আবার পানির তলে উধাও হয়ে যায়। তবে শিশুটির মায়ের কাছে সবসময় দুধ খাওয়ার বায়না থাকে তার। একটু পর পর মাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করে বাচ্চাটি। মা পানিতে ডুব দিলেও মেয়ের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না মা হস্তীটি। পানির মধ্যেই ডুবে ডুবে দুধ খেয়ে নেয় বাচ্চাটি। পানিতে দুধ খেলেও মুখে কখনো দুধের সাথে এক ফোঁটা পানি যায় না।

বাচ্চারা ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ পান করে। পরে আস্তে আস্তে ঘাস, লতা-পাতা ও দানাদার খাবারে অভ্যস্ত হয়। তবে এক বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ ছাড়ে না তারা। পানিতে ভিজে থাকা অবস্থা তাদের শরীর নজর কাড়া চকচকে দেখায়। জলহস্তী দেখলে নিরীহ মনে হলেও এ প্রাণিটি রাগ প্রকাশের ধরনটা একেবারে অন্য রকম। রাগলে তাদের শরীর ক্রমাগত ঘামতে থাকে। আর সেই ঘামের রঙ হলো লাল। দেখলে মনে হবে শরীর দিয়ে যেন রক্ত ঝরে যাচ্ছে। 

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানান, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি এখানে জলহস্তীর এ দ¤পতিটি আনা হয় দক্ষিণ অফিকা থেকে। এ পর্যন্ত  তাদের আলাদা কোন নাম রাখা হয়নি। তবে হিপু তাদের বলে ডাকলে তারা সাড়া দেয়। তাদের প্রথম বংশধরেরও কোন নাম রাখা হয়নি। হিপু বলে ডাকলে তারা খাবার খেতে উঠে আসে।

২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর টিটো নামের আরো একটি জলহহস্তী ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা হয়েছে। তবে তাকে রাখা হয়েছে ভিন্ন এনক্লোজারে (জলাশয়ে)। বাচ্চাটিসহ এনিয়ে সাফারি পার্কে মোট জলহস্তী রয়েছে তিনটি।

বড় তিনটির মধ্যে একটি পুরুষ ও দুইটি মাদী জলহহস্তী রয়েছে। এ হস্তীরা ঘাস, ভুট্টার দানা, গাজর, মিস্টি কুমড়া, গমের  ভূষিসহ কিছু দানাদার খাবারও খেয়ে থাকে। কাউকে ভয় দেখাতে কিংবা ক্ষুধা পেলে মাঝে-মধ্যে মুখটি বড় করে হা করে রাখে। ক্ষুধা লাগলে তারা পানি ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠে আসে।

সকালে খাবার খেতে স্থলে উঠে আসার পর পানিতে নামলে দিনে আর ডাঙ্গায় উঠে আসছে না মা হস্তীটি। সন্ধ্যার পর মাঝে মধ্যে জনমানবহীন পরিবেশে তারা স্থলে উঠে আসে। জলহস্তীর খাঁচার সামনে গেলে দেখা যায় বাচ্চার সাথে মায়ের নানা খেলা। যেহেতু এখন পর্যন্ত বাচ্চাটিকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়নি, তাই সে-টা মাদি না পুরুষ তা নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়নি। বাচ্চার কাছে যেতে চাইলে মা হস্তীটি বড় হা করে হামলা হালাতে তেড়ে আসে, উচ্চ শব্দে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ে।

ঢাকাটাইমস/০৭মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি