স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা

প্রকাশ | ০৯ মে ২০১৭, ১৩:১৩ | আপডেট: ০৯ মে ২০১৭, ১৩:৩৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী মিতু আক্তারকে কুপিয়ে হত্যার পর মাদকাসক্ত স্বামী পরিবহন শ্রমিক মোশারফ হোসেন আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনায় ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জে থানার ওসি (তদন্ত ) আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, জালকুড়ি এলাকার আহসান উল্লাহ সরদারের ছেলে মোশারফ হোসেন পরিবহন শ্রমিক। গত ১৬ বছর আগে বরিশালের চরমোনাই এলাকার কাসেম সরদারের মেয়ে মিতু আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী রায়হান এবং চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নয় বছর বয়সী মুন্নী নামের দুই সন্তান রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা সেবন করতেন। তার মাদক সেবন নিয়ে স্ত্রীর মিতু আক্তারের সঙ্গে প্রায়ই পারিবারিক কলহ হতো। এরই জের ধরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী আত্মহত্যা করেছেন।

নিহত মোশারফ হোসেনের অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রায়হান জানায়, তার বাবা মোশারফ ইয়াবা সেবন করতেন। তার মা মিতু আক্তার বাবাকে মাদক সেবন ও মাদকসেবীদের সঙ্গে চলতে বারণ করেন।  কিন্তু বাবা তা শুনতো না। মাদক সেবন করে এসে প্রায়ই মাকে মারধর করতো। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো। মা কয়েকবার রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মা আমাদের দুই ভাইবোনের কথা চিন্তা করে আবার ফিরে আসেন। মঙ্গলবার সে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যায়।  নামাজ শেষ করে আসার পর রায়হান দেখে তার বাবা মোশারফের হাতে বটি। কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবা তাকে লাথি দিয়ে ঘর থেকে  বের করে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দুই গেইটে দুটি তালা ঝুলিয়ে দেয়। ঘরের ভেতরে ছিল ছোট বোন মুন্নি।

মেয়ে মুন্নি জানায়, বাবা এক রুমে ভাইকে নিয়ে ঘুমায়। আমি আর মা আরেক রুমে ঘুমাই। ভোরে বাবা আমাদের রুমে এসে বলেন, আজ তোকে শেষ করে দে। বাবার হাতে বটি। এক পর্যায়ে বাবা মাকে হত্যার জন্য কোপানো শুরু করেন। মা ভয়ে খাটের নিচে গিয়ে অবস্থান নেন। আমি আর মা চিৎকার শুরু করি। বাবা আমাকে বুকের মধ্যে লাথি মেরে চুপ থাকতে বলেন। বাবা মাকে খাট ভেঙে সেখানে থেকে টেনে এনে বটি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলেন।

মুন্নি বলে, আমি বাবাকে বলি বাবা আমার কাল পরীক্ষা। সকালে পড়তে হবে। তুমি এমন করো না। কিন্তু বাবা বলে তোর আর পড়তে হবে না। এ সময় মা পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকে। আমি মাকে বলি মা চুপ করো। বাবা শুনলে তোমার যে জীবনটুকু আছে তা শেষ করে দেবে। পানি পানি করার শব্দ পেয়ে বাবার আবার মায়ের পেটের উপর উঠে দাঁড়িয়ে কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে বলতে থাকে তোর মা মরার দেখছস এবার আমি কারেন্ট জড়িয়ে কিভাবে মরি তা দেখবি।  আমি চিৎকার করছি বলে বাবা আমার মুখে বুকে লাথি মেরে আমাকে বাথরুমের ভেন্টিলেটার দিয়ে ঘরের বাইরে ফেলে দেন। পরে বাবা ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহত মোশাররফ হোসেনের বড় ভাই নূর সালাম ঢাকাটাইমস জানান, আমরা চিৎকার করে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি ঘরের দরজা তালা বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও দরজা ভাঙা যায়নি। এক পর্যায়ে মোশারফ ঘরের দরজা ও জানালায় বিদ্যুতের তার ঝড়িয়ে দেয়। সে মাদকাসক্ত ছিল। প্রায়ই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ সষ্টি হতো।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত ) আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে মাদকাসক্ত স্বামী মোশারফ হোসেন স্ত্রী মিতু আক্তারকে হত্যা করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/প্রতিনিধি/জেবি)