প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি!

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৭, ০৮:১৭

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আবার তিনিই একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। বিধিতে বলা আছে এমন কাজ করা যাবে না। অথচ মো. নজরুল ইসলাম এসবে থোরাই কেয়ার করছেন। সপাট বলেছেন, ‘এসব দেখার দায়িত্ব মিডিয়ার নয়।’
বিষয়টি নিয়ে অনেক আগেই অভিযোগ ছিল ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের। কাজ হয়নি। কারণ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার খুঁটি জোর শক্তপোক্ত, তিনি নাকি নিজেই বলে বেড়ান এসব কথা। এবার অভিভাবকরা আর চুপ রইতে পারলেন না। চুপ কীভাবে রইবেন? নিজের সন্তানেরা যখন এসএসসিতে দেদারে অকৃতকার্য হন তখন কি চুপ থাকা যায়? এর উপর তার বিরুদ্ধে টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগও আছে।  

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৯৫ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৩৪ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বাকি ৬১জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২০১৬ সালে স্কুলটি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৬০ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর অকৃতকার্য হয় ৪৫ জন। ২০১৫ সালে ১২জন এবং ২০১৪ সালে আটজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বিগত কয়েকবছর বিবেচনা করলে এ বছরের ফলাফল বিপর্যয় স্পষ্ট বোঝা যায়।

গাজীপুরের সদর উপজেলার ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৬৮ সালে। শুরু থেকে সুনাম ছিল ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপিঠটির। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকেরা অসন্তুষ্ট। স্কুল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে আছেন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি সদর উপজেলার ৭নং পিরুজালী উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। অথচ ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহাকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) দেবেশ চন্দ্র সরকার সাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকারি প্রাথমিকক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী শিক্ষকের চাকরি বদলিযোগ্য। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কর্মপরিধিতে তাদের নিজ বিদ্যালয়ে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়াও সরকারি কর্মচারি (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর পরিপন্থি। কাজেই সরকারি এবং নবঘোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী শিক্ষকদের অন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’

ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র  লেখক ও সাংবাদিক শাহান সাহাবুদ্দিন সম্প্রতি তার ফেসবুকে ‘ফুল বাগানে পাগলা হাতি’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি সেখানে ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক তার স্কুল অথবা অন্য কোনো স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। নজরুল ইসলামের বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। শিগগির তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি চলতি বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার সভাপতি থাকার বিষয়ে একটি পক্ষ হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছে। তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন কি পারবেন না সেটা মিডিয়ার দেখার বিষয় নয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, তার সভাপতি পদে থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আদালত দেবে। এই বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের কথা বলার সুযোগ নেই। টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এসবের মধ্যে আমি নাই।’
জানতে চাইলে ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকার টেন্ডার হয়েছিল। সমস্যাও ছিল। পরে অনেক চেষ্টার পর তিন লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সেই অর্থ বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়েছে।’

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক দাবি করে তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থী ফেল করলে তাকে আমরা বাদ দেই না। ছাত্র-ছাত্রী ফেল করেছে তাতে কী হয়েছে! এখানে তো সমস্যা দেখি না! এবছর যারা ফেল করেছে সামনের বছর তারা পাশ করবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল হতাশাব্যাঞ্জক। গাজীপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলাতে এই ধরনের ফলাফল কাম্য নয়। প্রতি বছর ওই স্কুলের এতো পরীক্ষার্থী কেনো ফেল করছে তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে। ওই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে কোন অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

সদর উপজেলার ৭নং পিরুজালী উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, নজরুল ইসলাম বেশির ভাগ সময় স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। বেশ কয়েকদিন পরপর তিনি স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। তিনি সদর উপজেলার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। পাশপাশি তিনি ঝুট ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যর সঙ্গে জড়িত। এত সব জায়গায় সময় দিতে গিয়ে তিনি মূল কাজই করতে পারেন না।

(ঢাকাটাইমস/ ১৮ মে/ প্রতিনিধি/ এইচএফ)