সাড়ে পাঁচ মাসে এক চিকিৎসক অফিস করেছেন ১৩ দিন

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৭, ০৯:৪৭ | আপডেট: ২১ মে ২০১৭, ১০:০১

নাঈমুল হাসান রাসেল, বরগুনা

বরগুনা সদর উপজেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের চিকিৎসক থেকেও নেই। নাসির উদ্দিন আহমেদ নামে এক জন গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবন্ধী ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে যোগ দেন। কিন্তু তিনি কাজ করেন না বললেই চলে। 

অভিযোগ উঠেছে যোগদানের পর থেকেই তিনি তার কর্মস্থলে মাসে দুই তিন দিন উপস্থিত থেকে বাকি দিনগুলো থাকছে নিয়মিত অনুপস্থিত। আবার অনুপস্থিত থাকলেও মাসের শেষে এসে তিনি হাজিরা খাতায় এক দিনেই সব সই করে দিয়ে যান।

এই চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলায় ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিবন্ধীদের জন্য নেয়া সরকারে উদ্যোগ। দিনের পর দিন তার অনুপস্থিতির কারনে সেবাপ্রার্থী রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আবার যে কয়দিন তিনি হাসপাতালে থাকেন সেই কয় দিনও তিনি বিনামূল্যে সেবা দেয়ার বদলে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে বরগুনা জেলা শহরের একমাত্র প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রটি। এই কেন্দ্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে বাত ব্যাথা থেকে শুরু করে সকলপ্রকার পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগী এবং প্রতিবন্ধীদের সেবায় এখানে বিনামূল্যে উন্নতমানের থেরাপী চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

কেন্দ্রটির অন্য কর্মীরা জানান গত বছরের শেষের দিকে নাসির উদ্দিন আহমেদ এখানে যোগদানের পর জানুয়ারি মাসে তিনি অফিস করেছেন ৪ দিন। ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসে তিনি অফিস করেন দ্ইু দিন করে। আর চলতি মে মাসে এখন পর্যন্ত অফিস করেছেন তিন দিন। 

তবে এপ্রিল এবং মে মাসের হাজিরা খাতা দেখে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যাবে না। কারণ একদিনে তিনি সই করেন পেছনের সব অনুপস্থিতির ঘরে। 

রেহানা বেগম নামের পক্ষাঘাতগ্রস্থ এক রোগী বলেন, ‘বরগুনা সদর উপজেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের এর আগের রফির নামের একজন ডাক্তার ছিলেন। তার সময়ে তিনি নিয়মিত বাম হাতে থেরাপি দিতেন। তিনি বদলি হওয়ার পর নতুন যে ডাক্তার এসছেন, তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ডাক্তার না থাকার কারণে থেরাপি দিতে পারছি না।’

প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের অফিস সহকারী ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘চিকিৎসক নাসির উদ্দিন আহমেদ কখনো মা, কখনো স্ত্রী অসুস্থের অজুহাতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন। এ কারণে চরমভাবে ব্যাহাত হচ্ছে এই কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা।’

হাসপাতালের টেকনিিিশয়ান মো. শামীম বলেন, ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারনের বরগুনার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে স্ব্যাস্থসেবা মারাতœক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে শহর সমাজসেবার সভাপতি মো. সাহাবউদ্দিন সাবু বলেন, ‘ডাক্তার নাসির উদ্দীনের যোগদানের পর গত ছয় মাসে আমি যতবার বরগুনা সদর উপজেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের খোঁজ খবর নিতে গিয়েছি, তত দিনই আমি ডাক্তারকে অনুপস্থিত দেখেছি। সর্বশেষ গত সোমবার ( ১৫ মে) সকালেও আমি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে  খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি ডাক্তার অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতির কারণে হাজিরা খাতায় তার মে মাসে কোন সই ছিল না।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিকেলে যখন শুনি ডাক্তার  এসেছেন। তখন আমি তার সাথে দেখা করতে যাই। এসময় আমি তার অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে, তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এসময় আমি তার হাজিরা খাতা যাচাই করে দেখি তিনি পেছনের সব অনুপস্থিতির ঘরে উপস্থিতির সই করেছেন।’

এ বিষয়ে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বেশ কিছু অজুহাত দেখান চিকিৎসক নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থতার জন্য বেশ কিছুদিন ছুটিতে ছিলাম।’ তবে এর পক্ষে তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

বরগুনার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার মুখার্জী বলেন, ‘আমি যতবারই নাসির উদ্দিনের খোঁজ নিয়েছি, তাকে পাইনি। তিনি অনুপস্থিত ছিলেন সবসময়েই। তার কারণে সরকারের এই মহৎ উদ্দ্যোগটি ভেস্তে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি একাধিকবার অবহিত করেছি। শিগগির এর প্রতিকার হবে।

ঢাকাটাইমস/২১মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি