হুমকির মুখে হাওরের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৭, ১০:৩৮

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে

বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হুমখির মুখে পড়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কোনো রকম লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পড়েছে মারাত্মক হুমকিতে। হাওরাঞ্চলে বারবার ফসলহানির পর দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জুটানো যেখানে অসম্ভব সেখানে সেই পরিবারের কর্তারা কিভাবে জোগান দেবেন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ? এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যেমন নানা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তেমনি শিক্ষার্থীরাও বাবা-মায়ের এ দূরাবস্থা দেখে তাদের নিজের জীবনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে। একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে এই পরিস্থিতির কথা।

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে ২৩টি। এগুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। দুটি মহাবিদ্যালয়ে রয়েছে দুই হাজার তিন শয়ের মতো  শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হলেও শিক্ষাসংক্রান্ত আনুসঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগান দিতে হয় অভিভাবকদের। 

কৃষিনির্ভর উপজেলা হওয়ায় কৃষক পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস বোরো ফসল।  চলতি বছর অকাল বন্যায় উপজেলার ২৩টি ছোট-বড় হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষিকে কেন্দ্র করে চলে হাওরাঞ্চলে জীবন জীবিকা।

বর্তমানে কৃষক পরিবারের গৃহে কোনো খাদ্য নেই। খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে সব কৃষক পরিবারই দিশেহারা। সরকারের বিভিন্ন সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। তবে আনুসাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে তারা নানানভাবে হিমশিম খাচ্ছেন।

ফলে দিন দিন এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষাসহ নানা বিষয়ে। স্থানীয় সাধারণ মানুষদের দাবি শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, শিক্ষা সহায়তার ব্যপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। হাওরে দুর্যোগে শিক্ষা সহায়তা না পেলে হাওরপাড়ের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা না পেলে জীবিকার তাগিদে পিতা-মাতার সাথে কাজের সহযোগী হিসেবে এলাকা ছাড়বে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী । সেই সাথে  শিক্ষার জোগানোর অভাবে হাওরপাড়ের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে বলেও আশঙ্কা করছে সুধী সমাজ।

তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী উপজেলা সদরের জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল আজিজের মেয়ে জিনিয়া জাফরিন তিশা ঢাকাটাইমসকে জানায়, প্রতি বছর বোর ফসল উঠার পর সে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য নতুন ইউনিফরম বানায়। কিন্তু এবার বাবা মায়ের কাছে বলার সাহস পাচ্ছে না, তাই পুরনো ইউনিফর্মটি পরেই বিদ্যালয়ে যেতে হবে।

বড়দল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক বড়দল গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান কাজের সন্ধানে বড়দল গ্রামের অনেক ছাত্র তাদের বাবা মায়ের সাথে শহরে পাড়ির জমাচ্ছেন।

উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের গ্রাম মন্দিয়াতা, ওই গ্রামের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া ঢাকাটাইমস বলেন, জীবিকার তাগিদে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী তার বাবা-মায়ের সাথে কাজের সন্ধানে চলে যাবে সেই সাথে অনেক পরিবার শিক্ষার যোগান দিতে না পারলে শিক্ষার্থীরা আর বিদ্যালয়ে আসবে না।

তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ অধ্যক্ষ ইয়াহিয়া তালুকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাহিরপুরে শিক্ষার যোগানটাও কৃষি থেকেই আসে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চলতি বছর এর প্রভাব শতভাগ শিক্ষাতেও পড়বে।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকার তাহিরপুর উপজেলায় ছয় হাজার ৮০০ পরিবারকে ১০ টাকা কেজির চালের পাশাপাশি ১৫ হাজার ৫০০ পরিবারকে ভিজিএফ এর কার্ড প্রদান করেছে। আরও প্রায় ১০ হাজার কার্ড বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাংসদ বলেন, তাহিরপুর উপজেলার শিক্ষার্থীদের আগামী এক বছরের মাসিক বেতন তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিশোধ করবেন। 

(ঢাকাটাইমস/২১মে/প্রতিনিধি/জেবি)