কখন কতটা পানি পান করবেন?

প্রকাশ | ২২ মে ২০১৭, ২২:৫৯

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

পানি না থাকলে শরীরটাই থাকবে না! আমাদের দেহের কোষ-কলার কাজকর্ম সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পানি অপরিহার্য। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে, রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বার করে দিতে, সুষ্ঠুভাবে পাচনক্রিয়া পরিচালনা করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অস্থিসন্ধির নমনীয়তা রক্ষা করতে ও সর্বোপরি মস্তিষ্ক রক্ষা করার জন্য পানি অপরিহার্য। এছাড়া বয়স ধরে রাখতে ও ত্বক টানটান রাখতে জলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এককথায় বলা যায় পানি ছাড়া আমাদের দেহযন্ত্রটি অচল হয়ে পড়বে।

দৈনিক কতটা পানি প্রত্যেকের পান করা উচিত?

সাধারণত দিনে প্রত্যেকের তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। অবশ্য কে কোন ধরনের পানিবায়ুতে বাস করছেন, কেমন ধরনের কাজ করছেন তার ওপরে পানিপানের অভ্যাস ও পরিমাণ নির্ভর করে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মানুষের ঘাম হয় বেশি। ফলে অনেকটা পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে যারা শীতপ্রধান দেশে বাস করেন, তাঁদের ঘাম হয় কম। তাঁদের পানিপানের পরিমাণ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বসবাসকারী মানুষের চাইতে নিশ্চয় কম হবে। আবার কিছু মানুষ সারাদিন এসি’তে থাকেন। শরীর থেকে ঘাম ঝরে না একবিন্দু। অথচ কিছু লোককে দিনভর রৌদ্রে ঘাম ঝরিয়ে কাজ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই শ্রেণির মানুষকে পানি একটু বেশিই পান করতে হবে।

ছোটরাও বাইরে ঘোরাঘুরি করে, ছোটাছুটি করে। এই গ্রীষ্মে তাদের কতটা পানি করা দরকার?

 ছোট মানে কতটা ছোট, সেটা দেখতে হবে। সাধারণভাবে স্কুলে যায় এমন বাচ্চাদের সম্পর্কে বলা যেতে পারে। স্কুলগোয়িং বাচ্চাদের অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন যেখান সেখান থেকে পানি না খায়। সেক্ষেত্রে পানিবাহিত নানা অসুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

বড়দেরও পানিবাহিত অসুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে। শুদ্ধ পানি পান করার উপায় কী?

বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশে সরকারেরই দায়িত্ব থাকে জনগণকে শুদ্ধ পানি সরবরাহ করার। এ দেশে বহু জায়গায় কোনও কোনও বাড়িতে পানিই পৌঁছয় না! সেখানে শুদ্ধ পানি সরবরাহ করা তো আরও বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত দেশে শহরে যে সমস্ত উৎস থেকে পানি সরবরাহ হয়, সেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এমনকী ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সেই জলের গুণমানের পরীক্ষা হয়। আমাদের দেশে সেইরকম নজরদারির ব্যবস্থা কোথায়? ফলে এ দেশের মানুষের মধ্যে হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ই, টাইফয়েড, কলেরা, ডায়ারিয়া মতো পানিবাহিত রোগ হয়। নজরদারির কারণেই উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে এই রোগগুলি কম দেখা যায় আর এ দেশে বেশি হয়।

সাধারণ মানুষ কীভাবে শুদ্ধ পানি পান করতে পারে?

খুব সহজে শুদ্ধ পানি পাওয়ার একটাই উপায় আছে। পানি ফুটিয়ে পান করা। রাতে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে জলে থাকা ব্যাকটেরিয়া মারা পড়বে। তারপর সারারাত একটা পাত্রে সেই পানি রেখে ঠান্ডা করতে হবে। এর ফলে জলে থাকা অজৈব পদার্থগুলি জলের নিচে থিতিয়ে পড়বে। সকালে পাত্রে রাখা জলের নিচের অংশটুকু রেখে বাকিটা ছেঁকে পান করলেই চলবে। এছাড়া যাঁদের বাড়িতে ওয়াটার পিউরিফায়ার রাখার সামর্থ্য আছে, তাঁরা নিজের উদ্যোগে রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তিযুক্ত ওয়াটার পিউরিফায়ার রাখতে পারেন। তবে এই পদ্ধতি খরচসাপেক্ষ এবং অনেকটা পানি নষ্ট হয়।

সাধারণ পিউরিফায়ার ব্যবহার করা কি যাবে না?

সাধারণ পিউরিফায়ারে নোংরা আটকানোর ক্ষমতা থাকলেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ধ্বংস ও প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেই।

খাওয়ার আগে পানি পান করলে কি খাবার হজম ভালো সাহায্য করে?

সেরকম কোনও ব্যাপার নেই। অনেকে রোগা হওয়ার জন্য প্রতিবার খাওয়ার আগে অনেকটা পানি পান করেন। এর ফলে জিভ চাইলেও অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যায় না। তবে খাবার খাওয়ার অন্তত আধঘণ্টা পর পানি পান করলে খাদ্য হজমে সুবিধা হয়।

খাবার সময়ে পানিপান করলে নাকি খাদ্য ভালো হজম হয় না?

এরকম নির্দিষ্ট কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। খাবার খাওয়ার সময় সামান্য পরিমাণে পানি পান করাই যায়। মুশকিল হল, অনেকেই সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করে খান। পানি দিয়ে খাবার গিলে নেন। এমন অভ্যাস ভালো নয়। খাবার চিবিয়ে খেলে তবেই হজম দ্রুত হবে। কারণ খাওয়ার সময় মুখগহ্বরে থাকা নানা গ্রন্থি থেকে এনজাইম ক্ষরিত হয়ে খাবারে মেশে। এছাড়া পাকস্থলীসহ পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অ্যাসিড, এনজাইম ক্ষরিত হয়। খাবার খেতে খেতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে সেগুলির কার্যকারিতা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ফল খেয়ে পানি খেতে নেই কেন?

আলাদা করে কোনও কারণ নেই। ফলও তো আসলে খাবার। খাবারের সঙ্গে হজমে সাহায্যকারী অ্যাসিড, এনজাইমগুলি মিশতে হবে। সেকারণেই অনেকে ফল খাওয়ার পরেই পানি খেতে নিষেধ করেন। তবে সামান্য পানি পান করাই যায়।

পানি খুব কম পান করলে কী কী বিপদ হতে পারে?

যে কোনও কাজেই খুব দ্রুত ক্লান্তি আসবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেবে। হজমে সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, দ্রুত জরা আসা, নার্ভের অসুখ, কিডনি, হার্টের সমস্যা— নানা ধরনের রোগ হতে পারে। আগেই বলেছি, পানি ছাড়া শরীরযন্ত্রটি অচল।

পানি কম খেলে যেমন বিপদ, বেশি খেলেও কি বিপদ হয়?

অতিরিক্ত যে কোনও কিছুই শরীরের পক্ষে খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের বেশি পানি পান করলে হাইপোথার্মিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে, সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়, পেটের ও লিভারের সমস্যা দেখা দেয়, ব্রেনসহ সারা শরীরের কোষ ফুলে যায়। এছাড়া হার্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, বেড়ে যায় কিডনির কাজ । দীর্ঘ দিন এমন হতে থাকলে হার্ট ও কিডনির অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

কোন কোন অসুখ থাকলে পানি পান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে?

হার্টের ও কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পানি পান করুন। বিশেষ করে কিডনির অসুখ থাকলে রোগীকে সারাদিনে হিসাব করেই পানি পান করতে হবে।

কেউ ঠান্ডা পানি পান করতে ভালোবাসেন, কেউ আবার গরম পানি। এই ধরনের অভ্যাসের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি শরীরে পড়ে?

চীন দেশে আগে লোকে উষ্ণ পানিই পান করত। আর উষ্ণ পানি পান করে তাঁদের জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, এমন খবর এখনও পর্যন্ত নেই। তা বলে ফোসকা পড়া গরম পানি নিশ্চয় কেউ পান করেন না! আর ঠান্ডা জলের প্রসঙ্গে বলি, বহু মানুষ ঠান্ডা পানি পান করতে পছন্দ করেন। আসলে কে, কেমন পানি পান করবে তা মানুষ এবং একটা জাতির অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। সূত্র: ওয়েবসাইট

(ঢাকাটাইমস/২২মে/জেবি)