নাগরনদ দখল করে বহুতল ভবন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৭, ০৮:২০

সাইফুল ইসলাম, নাটোর থেকে

নাটোরের সিংড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নাগর ও গুড়নদ দখল করে বহুতল ভবন, বাসা বাড়ি ও দোকান পাট নির্মাণ করায় নদীর ঐতিহ্য ও গতি প্রবাহ হারিয়ে যেতে বসেছে। সম্প্রতি পৌরসভার কাঁটাপুকুরিয়া মহল্লায় স্থানীয় দুই চিকিৎসক নাগর নদের তিন শতক জমি দখল করে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের আশঙ্কা এই ভবন নির্মাণের কারণে নৌ-চলাচল ব্যাহত হবে এবং নদ রক্ষা বাঁধ বিলীন হয়ে যাবে। পাশাপাশি ভরা বন্যার মৌসুমে নৌ-যাত্রীদের পড়তে হতে পারে বড় দুর্ঘটনার কবলে।

 সিংড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাঁটাপুকুরিয়া মৌজার পাঁচ নম্বর দাগের তিন শতক জমি অনেক আগেই নদে বিলীন হয়ে গেছে। জমি শিকস্তি আইন অনুযায়ী এই তিন শতক জমির মালিক সরকার। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় চিকিৎসক আহাদ আলী ও আমিন উদ্দিন নদের ভেতরের এই জমি দখল করে পাঁচতলা ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এতে করে নৌ-চলাচল ব্যাহত ও নদ রক্ষা বাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ইতিপূর্বে ২০১৩ সালেও এই জমিই দখল করে পাঁচতলা ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন স্থানীয় এই দুই চিকিৎসক। তখন এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে জরিপ শেষে নির্মিত অবকাঠামো সরিয়ে নেয়ার জন্য এই চিকিৎসকদের জানিয়ে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিংড়া সহকারী জজ আদালতে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মামলা করেন ডা. আহাদ আলী (মামলা নম্বর-২১৭/১৩)। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত আদালত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মামলার বাদী ডা. আহাদ আলীর তদবিরে গত ১০ অক্টোবর/২০১৬ তারিখে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বদলিজনিত কারণে আবারও সম্প্রতি এই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন ওই দুই চিকিৎসক। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদের নিচ থেকে আরসিসি পিলার করে ভবনের নিচের অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম তলার কাজ শুরু করা হয়েছে। আর এই ভবণ নির্মাণ হলে নৌযান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হবে। তাছাড়া সিংড়া পৌর শহরের বাজার সংলগ্ন নাগর ও গুড়নদ দখলদারদের জন্য ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে।

ইতোমধ্যে নদী দখল করে ঘর বাড়ি, দোকান পাট ও বহুতল ভবন নির্মাণ করছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ হারিয়ে শহররক্ষা বাঁধসহ কৃষকের ফসলি জমি হারিয়ে যেতে বসেছে। আর এসব বিষয়ে এলাকার সচেতন মহল একাধিকবার অভিযোগ করলেও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসব ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের হাত থেকে নদী বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।

তবে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক চিকিৎসক আহাদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিজের জমিতে তিনি এই ভবন নির্মাণ করছেন।

সিংড়া পৌর ভূমি কর্মকর্তা মনিন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, তিনি এসিল্যান্ট এর নির্দেশ মোতাবেক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন ভবনটি পুরোপুরি নদের ভেতর করা হচ্ছে। এতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হবে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাছাড়া নদের গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে পানির চাপে সেখানকার শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই তিনি তাৎক্ষণিক ওই চিকিৎসককে ভবনের আর কোনো কাজ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

সিংড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওই নদী দখলের বিষয়ে তিনি পৌর ভূমি কর্মকর্তা মনিন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তীকে সরেজমিনে গিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। নদী দখল করে কেউ ভবন নির্মাণ করলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/জেবি)