উত্তরায় অবৈধ ‘কেজ বক্সিং’, কিছুই জানে না পুলিশ

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৭, ০৮:৩৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০১৭, ১১:১৪

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

প্রথম দেখলে মনে হবে হলিউডের কোনো রগরগে অ্যাকশন সিনেমার দৃশ্য। খাঁচায় বন্দী দুজন লড়াকু বক্সার মরণপন লড়াই করছেন। একজন অপরজনকে হারাতে চান। নিয়ম কানুনের বালাই নেই, যেভাবেই হোক জিততেই হবে।

মুষ্টিযুদ্ধের আদলে সাজানো হলেও এধরনের খেলা হয় মূলত  ‘ফ্রি স্টাইল-এ। আর এর মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে জুয়া। খেলোয়াড়ের পক্ষে বিপক্ষে সাধারণত জুয়ার মতই বাজি ধরেন দর্শকরা।

হুবহ একই রকম না হলেও অনেকটা এরকমই এক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায়। মিক্সড মার্শাল আর্ট (বক্সিং, জুডো, কারাতে, গ্যাপলিন, কিক) ‘কেজ বক্সিং’ টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে হোর্ড এমএমএ নামের একটি মার্শাল আর্ট একাডেমি। ‘কেজ বক্সিং’ এর খেলায় বিশেষ ভাবে তৈরি খাঁচার ভেতরে খেলোয়াড়দের আটকে লড়াই করানো হয়। আর কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ ‘কেজ বক্সিং’ খেলানো হচ্ছে এখানে। এতে অংশও নিয়েছেন ৩৫ জন খেলোয়াড়। বাইরের কোন দর্শক আমন্ত্রিত না হলেও সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতাটি ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।

রাজধানীর উওরা ১১ নম্বর সেক্টরের ৩৪ নম্বর বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে হোর্ড এমএমএ অ্যান্ড মার্শাল আর্টস একাডেমি। যেখানে বাচ্চাদের কারাতে, মার্শাল আর্ট সহ বিভিন্ন শারীরিক কসরত শেখানো হয়। কিন্তু এসবের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ‘কেজ বক্সিং’ এর আয়োজন করছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বিভিন্ন বয়সী তরুণ ও যুবকদের ‘কেজ বক্সিং’ শেখানো এবং খেলানো হয় এখানে। তাদের ভাষায় এরা সবাই ‘ফাইটার’। হোর্ড এমএমএ  ১৯ ও ২০ মে আয়োজন করেছিল ‘কেজ বক্সিং’ টূর্নামেন্টের।

অথচ বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।

প্রচলিত নিয়ম কানুন কিংবা নিরাপত্তার ব্যবস্থা না রেখে এ ধরনের আয়োজন কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘খেলোয়াড়দের বলা আছে এমন কোন জায়গায় বা এমন কোন ভাবে হিট (আঘাত) না করা হয় যাতে কেউ আহত হবে। তাই আঘাত পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।’

ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের ভবনটির মালিক একজন মন্ত্রী। এটি দেশের প্রথম মিশ্র মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতা ছিল। তবে এখানে হারজিতের ব্যাপার ছিল না। শুধু ‘কেজ’ এর ভেতর এ খেলার জন্য সকল খেলোয়াড়কে ডাকা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আবার আয়োজন করা হলে সকল ফেডারেশন কে জানানো হবে।

হারজিত না থাকার কথা বললেও সেখানে প্রতিটি লড়াইয়ের উপর বাজি (বেটিং) ধরা হয় বলে প্রথমে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। যদিও পরে তিনি বিষয়টি পুরোপুরি চেপে যান।

প্রতিষ্ঠানটির কোন অনুমোদন আছে কি না ? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘মার্শাল ফেডারেশন থেকে অনুমতি নেওয়া আছে। তবে তাদের স্মারক নম্বর  জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন ‘এটা আপনাকে বলা যাবে না।’

পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে বক্সিং। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় খেলাটির। একই ওজনের দুইজন খেলোয়াড় মূলত বক্সিংয়ে অংশগ্রহণ করে। এর রয়েছে খুবই পরিষ্কার নিয়ম কানুন, যাতে করে কোনো খেলোয়াড়ের জীবন সংশয়তো দূরের ব্যাপার কোনো রকম মারাত্মক শারীরিক ক্ষতিও যাতে না হয়। অথচ তারপরও সামান্য অসাবধানতায় এই খেলায় জীবন নাশের আশঙ্কা থেকে যায়।

আর সেখানে কোনো রকম নিয়ম কানুন ছাড়াই এধরনের কেজ বক্সিং কি করে আয়োজন করা হচ্ছে সেটা ভাবনার বিষয়। কেন না বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন থেকে খেলার অনুমতি নিতে হলে আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল প্রকার সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আর এব্যাপারে বক্সিং ফেডারেশন থেকে সাহায্যও করা হয়। কিন্তু ফেডারেশন কে না জানিয়ে, এ ধরনের খেলার কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে, কিংবা খেলার আয়োজন করা হলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ হবে বলে বক্সিং ফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুস খান ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

এম এ কুদ্দুস বলেন, ‘বক্সিং ফেডারেশনের কাছ থেকে অনুমতি ছাড়া এমন কোন প্রতিযোগিতা হলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ এসব খেলা ফেডারেশনকেন্দ্রিক। আর খেলার সময় খেলোয়াড়রা কোন ধরনের আঘাতের শিকার হলেও দায়ভার তাদের, ফেডারেশনের নেবে না। এধরনের আয়োজনের আগে বক্সিং ফেডারেশন কে জানানো উচিত ছিল।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটা কারাতে বা বক্সিং একাডেমি খুলতে হলে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন লাগে। যেমন মার্শাল আর্ট ফেডারেশন, বক্সিং ফেডারেশন, কারাতে ফেডারেশন। ফেডারেশনের অনুমতি নিয়ে দক্ষ কোচ দ্বারা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেই কেবল সেখান থেকে ভালো মানের খেলোয়াড় পাওয়া যায় এবং তাদের দিয়ে প্রতিযোগিতা করানো যায়।’

এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে কিছু জানেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে উওরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী হোসেন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম এরকম কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা। যদি অনুমতিপত্র ছাড়া তারা এমন কোন খেলার আয়োজন করে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন গুলোকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে অতিদ্রুত খোজ খবর নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ওসি আলী হোসেন খান।