৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক চারজন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৭, ১০:৪৬

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে

শিক্ষক সংকটে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন।

জানা যায়, ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল তাহিরপুরে ১৯৫০ সালে উপজেলা সদরে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে নিম্ন মাধ্যমিক এবং ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাহিরপুর উপজেলা স্টেডিয়াম মাঠে এক জনসভায় বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন এবং ১৯৮৭ সালের ২৭ আগস্ট তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকা (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধরমপাশা-মধ্যনগর) একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এটি। আর এ নির্বাচনী এলাকার একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত করে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হয়।

জানা যায়, সরকারিকরণের পূর্বে বিদ্যালয়টিতে ১৩ জন শিক্ষক ও ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও সরকারিকরণের পর থেকেই বিদ্যালয়টিতে চলছে শিক্ষক সংকট।

সরকারি নির্দেশে একাধিকবার একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিলেও নিয়োগকৃত শিক্ষকরা এখানে এসে যোগদান করে কিছুদিন শিক্ষকতা করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। ফলে শিক্ষক সংকটের এ দূরাবস্থা কখনো কাটেনি। বর্তমানেও এ অবস্থা বিরাজমান তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭১০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত। তার বিপরীতে বিদ্যালয়ে পাঠদানে কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন চারজন। কাগজপত্রে বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও দুজন শিক্ষক প্রেষণে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ১৫ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানেন না বর্তমান প্রধান শিক্ষক। ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নুরুল ইসলাম দুই বছর  ধরে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায়। বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান ও ভূগোলের শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে এসে কোনো প্রকার জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে অফিস সহকারীর পদটি দুই বছর ধরে শূন্য রয়েছে অফিস সহায়কের দুটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী পারভেজ হাসান রিয়াজ জানায়, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় কিন্তু শিক্ষক কম থাকায় তাদের ক্লাস নিয়মিত হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি নুরুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ভালো ছিল, ভালো শিক্ষাব্যবস্থার কারণে অনেক দূর দূরান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা এসে এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুজ্জামান মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রায়ই খোঁজখবর নিই বিদ্যালয়ের পড়াশোনার বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা আমাকে জানায়, শিক্ষক সংকটরে কারণে বিদ্যালয়ে তাদের অনেক বিষয়ে পড়ানো হয় না। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে একাধিক বিষয়ে পাঠদান দিতে হচ্ছে।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল হেলিম ফকির ঢাকাটাইমসকে বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমাকান্ত দেবনাথ ঢাকাটাইমসকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পর অনেক শিক্ষক প্রেষণে অন্যত্র চলে যান ফলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট নিরসন হয় না। এ বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট এর উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে ইতিমধ্যেই ৪০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই যে সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে সেখানে নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের যোগদানের জন্য পাঠানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/জেবি)