প্রভাবশালীর কারণে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: শ্যামল কান্তি

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৭, ২০:১৪ | আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ২০:২৪

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ঘুষ গ্রহণের মামলায় কারাগারে পাঠানোর পিছনে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের দিকে ইঙ্গিত করেছেন আলোচিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। যে মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণের আগে সাংবাদিকদেরকে এ কথা বলেন তিনি।

শ্যামল কান্তি যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই স্কুলেরই ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষিকার চাকরি এমপিওভুক্ত করার কথা বলে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। গত বছর শ্যামলকে যে মাসে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল এই মামলাটি হয়েছিল তার দুই মাস পর। এতে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই বর্ণনা করা ঘটনাটি ঘটেছিল আরও প্রায় দুই বছর আগে।

বুধবার এই মামলাতেই পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর শ্যামলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা  জারি করেন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম অশোক কুমার দত্ত। পরে তার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করেন।

ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের অভিযোগ তুলে শ্যামলকান্তিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ২০১৬ সালের ১৩ মে কান ধরিয়ে ওঠবস করান। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ শ্যামলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। আর তিনি চাকরি ফিরে চান। বিচারিক তদন্তে দেখা যায়, তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

কান ধরে উঠ-বসের ঘটনার দুই মাসের মাথায় ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন হয় নারায়ণগঞ্জের আদালতে।

আদালত ওই দিন বিকেলে শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেয়। আর ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক।

আত্মসর্মপণের আগে শ্যামল কান্তি সাংবাদিকদেরকে ভক্ত বলেন, ‘আমি এখানে ন্যায়বিচার পেলাম না। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে এই মামলা ফাঁসান হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ঘুষের অভিযোগ আনা হয়েছে আমি কখনো এই ধরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সকল কাজগপত্র আমার কাছে রয়েছে।’

শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনার পর এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, তবে সেটা উচ্চ আদালতের নির্দেশে। এই মামলাতেই আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

শ্যামল কান্তির বলেন, ‘আমাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় আমি মামলা করিনি। হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা হয়েছে। ওই মামলার কারণে আমাকে চাপে রাখার জন্যই এই (ঘুষ গ্রহণের) মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আগে থেকেই প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির পক্ষে কাজ করছে। ওই মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অন্য রকম হইতে পারত। কিন্তু ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুশি করার জন্যই পুলিশ এই ধরণের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।’

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমান আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিতের ঘটনা সারাদেশে আলোচিত। পুরো বিশ্ব দেখেছে একজন শিক্ষককে কীভাবে অপমান ও নির্যাতন করা হয়েছে। সেই শিক্ষক আদালত থেকে জামিন পেলেন না। তাকে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দুই পাত ধরে টেনে হেচড়ে পুলিশ পাহরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

ঢাকাটাইমস/২৪মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি