গরমে পুড়ছে উত্তরের জনপদ

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৭, ২০:২৮ | আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ২০:৪৫

প্রতীক ওমর, ঢাকাটাইমস

সারাদেশের মতো উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও চলছে জৈষ্ঠ্য মাসের তাপপ্রবাহ। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। ফলে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব জেলায় সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত বইছে উষ্ণ হাওয়া। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরুচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এদিকে প্রচ- তাপদাহ ও লোড শেডিংয়ের কারণে পানি দিতে না পারায় ফেটে চৌ-চির হচ্ছে হাজার হাজার একর বোরো ক্ষেত।

বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন শেষ হওয়ার আগে এইমাত্রা আরো বড়তে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গত পাঁচদিন ধরে চলা এই তাপ প্রবাহ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিসহ যন্ত্রণা। সূর্যের তাপে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। মার্কেটগুলোতেও লোকজনের সমাগম কমেছে। স্কুল, কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। খেটে খাওয়া শ্রমজীবীদের অনেকেই কাজে আসতে পারছেন না। রিকশাচালক, ভ্যানচালক এবং কুলি শ্রমিকরা বেশি কষ্টে আছেন। ফসলের মাঠে কৃষকের কাজ ব্যহত হওয়ায় এর প্রভাব পড়বে ফসলে।

বগুড়া পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, তার এরিয়ায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ২৬ মেমেগাওয়াট। বর্তমানে আছে ১৯ মেগাওয়াট। তিনি আরো জানান, জাতীয় গ্রিডে ঘাটতির কারণেই বগুড়ায় কিছুটা লোড শেডিং হচ্ছে।

এদিকে গোটা বগুড়া জেলায় গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমান চাহিদা ২২৫ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট।

এদিকে অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়াসহ দেখা দিয়েছে জ্বর সর্দি, কাশি এবং ভাইরাস জাতীয় রোগ। সরকারি, বে-সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে এ সকল রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগির মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

এদিকে স্কুলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রচ- গরমে ছোট ছোট বাচ্চারা ক্লাশ করতে কষ্ট পাচ্ছে। গরমে গেল কয়েক দিনে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।

এদিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট বরফ মিশ্রিত শরবত, ডাব বিক্রি বেড়েছে। হাপিয়ে ওঠা মানুষরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাবের পানি, তরমুজসহ ঠন্ডা জাতীয় তরল খাবার খাচ্ছেন। শহরের প্রেসপট্টির ডাব বিক্রেতা আব্দুল মজিজ জানান, কয়েক দিন আগে শুরু হওয়া গরমের কারণে বাজারে ডাবের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে যা বিক্রি হতো তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে এখন।
সাতমাথার লেবুর শরবত বিক্রেতা জসিম উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, গেল কয়েক দিনের গরমে তার বেচা বিক্রি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লান্ত পথিকরা পাঁচটাকা ও ১০ টাকার এক গ্লাস শরবত পান করে কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করছেন।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ডায়রিয়া জনিত রোগি এবং সর্দি জ্বরের রোগির সংখ্যা বেড়েছে। শহরের বে-সরকারি চিকিসা কেন্দ্রগুলোতেও গরম জনিত রোগির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।

মেডিসন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায় জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রভাব বেড়েছে। বিশেষ করে প্রচ- গরমে মানুষের ভেতর পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তবে গরমের পরিমাণ আরো বেড়ে গেলে হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।

চর্ম ও যৌন রোগ কনসালটেন্ট ডা. ছাইদুর রহমান জানান, প্রচ- গরমে মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সেবোরিক, ডার্মাটাইটিস, টিনিয়া, ক্যানডিডা, নিলিয়া জাতীয় রোগির সংখ্যা বাড়ছে। তিনি সকলকে এই সময় গরম থেকে সম্ভব্য দূরে থাকার পরমর্শ দেন। পাশাপাশি ঠান্ডা জাতীয় তরল খাবার বেশি করে খেতে বলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/প্রতিনিধি/ইএস)