জাতীয় কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৭, ০৮:২৯ | আপডেট: ২৫ মে ২০১৭, ১২:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। জাতি বিনম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় দিনটি উদযাপন করবে।

নজরুল ছিলেন চির তারুণ্য ও প্রেমের কবি। তার মধ্যে এই সঙ্গে দ্রোহ ও প্রেমের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে পৃথক বাণী দিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হবে কবিকে নিয়ে নিবন্ধ। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। এদিন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিকাল ৩টা ৩০মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনার পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ৩০ মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।

অন্যদিকে কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এদিন সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর ও চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

নজরুল ইনস্টিটিউট জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে এবং কাজী নজরুল ইসলামকে বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে কবির ছবি, পোস্টার ও বই প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর বই প্রদর্শনী, পাঠ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে।

ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

জাতীয় কবিকে নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওচিত্রসমূহ সংগ্রহ করে বিশেষত জাতির পিতার পরিবারের সাথে কবির বিভিন্ন ভিডিওচিত্রসমূহ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি একটি ডকুমেন্টরি প্রচার করবে।

বিশিষ্টজনদের মতে রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুরের বিন্যাসের উপরে কথা ঢলে পড়ে। তার গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন। অনেক ক্ষেত্রে গায়ক সুরের ঢেউয়ে বেশি মেতে যান। তখন গান হয়ে যায় রাগপ্রধান।

নজরুল বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্ল¬¬ব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

স্বাধীনতার লাভের পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/জেবি)