একটি শালিককে বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টা
প্রকাশ | ২৯ মে ২০১৭, ১৭:৩২ | আপডেট: ২৯ মে ২০১৭, ২২:৫৫
মধ্যরাতেও কোথাও আগুন লাগলে সবাই ফায়ার সার্ভিসের শরণাপন্ন হয়। কিংবা বড় কোনো দুর্ঘটনা সবখানেই ডাক পড়ে এই সংস্থাটির। ‘গতি, সেবা আর ত্যাগের’ বার্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার কর্মীরা ছুটে চলেন দুর্বার গতিতে।
তাই বলে একটি শালিক পাখির জীবন বাঁচাতে খবর দেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হাজির হবেন তা হয়তো অনেকে বিশ্বাস করবেন না! কারণ যেখানে জীবনবাজি রেখে চেষ্টা করার পরও বহু অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করতে আমরা কুণ্ঠাবোধ করি না! কিন্তু আপনার আমার এমন ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
খবর পাওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শালিক পাখিটাকে বাঁচাতে নিরন্তর চেষ্টা চালায় একদল কর্মী। কিন্তু উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ায় হেড কোয়ার্টার থেকে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এনে পাখিটি উদ্ধার করা হয়। যদিও ততক্ষণে পাখিটি আর বেঁচে নেই।
ফায়ার সার্ভিসের এমন তৎপরতাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে অবিহিত করেছেন ঘটনার সাক্ষী অসংখ্য মানুষ। তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে ছিল সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতার সুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকাল পাঁচটার দিকে। প্রতিদিন সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসেন। অনেকে আবার আড্ডার ফাঁকে টিএসসির উল্টো দিকের ফুটপাতে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সময় পার করেন।
বেসরকারি টেলিভিশন সময় সংবাদের রিপোর্টার রাশেদ বাপ্পীর সহকর্মীদের নিয়ে চা খেতে খেতে নজর পড়ে একটি মরা গাছের চূড়ার দিকে। দেখেন একটি শালিক পাখি তার বাসার ফাঁক দিয়ে নিচের দিকে ঝুঁলছে। ডানা মেলে বহুভাবে চেষ্টা করছেন নিজেকে বাঁচাতে। মুহূর্তে বিষয়টি তরুণ এই সংবাদকর্মীর ভেতরে নাড়া দেয়। পাখিটির জীবন কিভাবে রক্ষা করা যায় প্রথমে সঙ্গে থাকা ক্যামরাপারসন ও গাড়ির চালক ওমর ফারুককে নিয়ে চিন্তা করেন বাপ্পী। তবে ওমর ফারুকের চিন্তা ছিল সবার থেকে বেশি। ফায়ার সার্ভিসে ফোন করারও অনুরোধ করেন তিনি।
রাশেদ বাপ্পীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় ঢাকাটাইমসের। প্রথমে তিনি পরিচয় গোপন করেই ফোন দেন ফায়ার সার্ভিসে। পাখির জীবন বাঁচানোর অনুরোধকে আমলে নিলেও ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণ নিয়ে আন্দোলনের কারণে টিএসসির দিকে আসতে নিজেদের ঝুঁকির কথা বলে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাশ করেনি পাখিপ্রেমী এই মানুষগুলোকে।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যে পলাশী ফায়ার সার্ভিসের সাবস্টেশন থেকে একটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। এসেই চেষ্টা করতে থাকেন পাখিটি উদ্ধারে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। পাখির বাসাটি যে গাছে সেটি মরা হওয়ায় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল।
এরইমধ্যে হেডকোয়ার্টার থেকে বাপ্পীর কাছে সবশেষ খবর জানতে চাওয়া হয়। তখন আরও বড় গাড়ি পাঠানোর অনুরোধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে সুউচ্চ ভবনের অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত হয় এমন অত্যাধুনিক গাড়ি চলে আসে ঘটনাস্থলে।
সঙ্গে সঙ্গে পাখিটিকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দক্ষ কর্মী আবুল খায়ের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করেন। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায় টিএসসি এলাকায়। উপস্থিত সবার প্রার্থনা ছিল এত চেষ্টার পরও যেন পাখিটির জীবন রক্ষা পায়।
কিন্তু যতক্ষণে পাখির কাছে পৌঁছান আবুল খায়ের ততক্ষণে পাখিটি আর বেঁচে নেই।
ঘটনাটি নিয়ে সময় টেলিভিশনে সংবাদও প্রচার হয়। এতে উদ্ধারকারী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা জানান। একইসঙ্গে উপস্থিত বেশ কয়েকজন একটি পাখির জন্য ফায়ার সার্ভিসের এমন তৎপরতা দেখানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
আবুল খায়ের ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যদি পাখিটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতাম তাহলে আমার আরো ভালো লাগত, আনন্দ লাগত।’
সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর শাব্বির আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উন্নত দেশেরে মতো আমরাও যেকোনো উদ্ধারে অংশ নিয়ে থাকি। সেটা মানুষ হোক আর পশু পাখি হোক কোথাও যদি আটকা পড়ে সেটা উদ্ধারের জন্য সচেষ্ট থাকি। শুধু সঠিক সংবাদের অপেক্ষায় থাকি।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের এমন আয়োজন, এই আচরণ দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ।’
অন্য এক যুবক বলেন, ‘যখন এত সমস্যার মধ্যেও একটি পাখিকে বাঁচাতে দুটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসবে তখন বুঝবেন বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে।’
কেউ আবার সবাইকে পশু-পাখি যাই হোক সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। কেউ আবার বলছেন, একটি পাখির জন্য যা হলো একজন মানুষের বিপদেও যেন এড়িয়ে না গিয়ে সবাই এগিয়ে আসি।
পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সময় টিভির রিপোর্টার রাশেদ বাপ্পী। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আসলেই সঠিক সময়ে সঠিক খবর দিতে পারলে ফায়ার সার্ভিসের সাড়া পাওয়া যায় তা আবারো প্রমাণ হলো। একইসঙ্গে পাখির জন্যও যে মানুষের ভালোবাসা তাও প্রমাণ হয়েছে। সর্বত্র এই ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক এটাই প্রত্যাশা।’
(ঢাকাটাইমস/২৯মে/বিইউ/জেবি)