মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় চিহ্নিত রাজাকার

পরিমল মজুমদার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ মে ২০১৭, ১৪:৩৫ | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০১৭, ১০:১১
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে চিহ্নিত চার রাজাকার, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর সহযোগীদেরও তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৯৭১ সালে ১৩ বছর বয়সের নিচে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও চার জন কম বয়সী ব্যক্তিকে তালিকাভূক্ত করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উলিপুর কমান্ডের কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ সদস্য জামুকা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অভিযোগে সই করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উলিপুর কমান্ডের একজন সাংগঠনিক কমান্ডারসহ ৮ জন সহকারী কমান্ডার।

অভিযোগে বলা হয়, অর্থের বিনিময়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মান সম্মান ধূলিসাৎ করা হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিযোগে বলা হয়, উলিপুর পৌর এলাকার কুখ্যাত রাজাকার মোন্তাজ আলী, রোস্তম আলী, ধামশ্রেণী ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী ও থেতরাই ইউনিয়নের শাহাজাহান আলীকে টাকার বিনিময়ে খসড়া তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখিত রাজাকাররা যাচাই-বাচাই কমিটির সামনে জেরার মুখে নিজেদেরকে রাজাকার ছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন।

দেলওয়ার হোসেন একজন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হলেও তাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তার বাবা ছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম কর্তৃক ঘোষিত তালিকায় ৫৭ তম শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আবুল কাশেম মিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর ও দলদলিয়া ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সদস্য। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলো সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। যাচাই-বাচাই কমিটির সামনে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি বলে স্বীকার করেন।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন মুসলিম লীগ পরিবারের সন্তান। যাচাই-বাচাই কমিটির সামনে ওই চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- তার পক্ষে কোন দালিলিক প্রমাণ ও স্বাক্ষী দিতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের সকল মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেও যাচাই-বাচাই কমিটির কাছে কোন ফল পাননি।

অভিযোগে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে রেজাউল করিম আমিন বলেন, ‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা।’

দলদলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি কোন দালিলিক প্রমাণ ও সহযোদ্ধার স্বাক্ষী দিতে না পারলেও তাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের সকল মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের নুরুজ্জামান সরকার যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর চন্দ্রাভিযানের খবরে আনন্দ বাজারে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তিনি যাচাই-বাচাই কমিটির সামনে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কোন দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেননি। এমনকি কেমন করে রাইফেল থেকে গুলি ছুঁড়তে হয় তাও বলতে পারেন নাই।

যাচাই-বাচাইয়ের সময় গোলাম মোস্তফা স্বীকার করেন, তিনি বুড়াবুড়ি নদী ঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে আহত হন তার চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু তিনি প্রভাব খাটিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতা পেয়ে আসছিলেন।

উলিপুর পৌর এলাকার রামদাস ধনিরাম গ্রামের আবুল কাশেম মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী রাজনীতির সাথে যুক্ত। যাচাই-বাচাই কমিটির সামনে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি বলে স্বীকার করলেও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভারতীয় তালিকাভুক্ত ও লাল মুক্তিবার্তাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি ছাড়াই গত ৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গোপন কক্ষে যাচাই-বাচাই করা হয়। সেখানে বিতর্কিতদের তালিকাভুক্ত করা হয়। সভাপতি ও সদস্য সচিবের কাছে বারবার প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও কর্ণপাত না করে নিজেদের খেয়াল খুশি মত যাচাই-বাচাই করেন। গত ৪ মার্চ যাচাই-বাচাই শেষ হলেও দীর্ঘদিন পর গত ১৬ মে সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শুধু ৬২ জনের তালিকা নোটিশ বোর্ডে আঠা দিয়ে সাঁটিয়ে দেন। কিন্তু এক ঘন্টার ব্যবধানে তা আবার তুলে ফেলা হয়। তালিকা চেয়ে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি তালিকা সরবরাহ করেননি।

শিশু মুক্তিযোদ্ধা

অপরদিকে নীতিমালা অনুযায়ী ১৯৭১ সালে বয়স ১৩ বছরের কম ছিল-এমন কেউ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন করতে পারবে না। কিন্তু এখানে ১৩ বছরের নিচে আব্দুল জলিল শেখ, রুহল আমিন, আব্দুল গাফফার ও আব্দুস ছালাম নামের চার জনকে খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি বলেন, ‘আমরা কাগজপত্রের ভিত্তিতে কাজটি করেছি। যদি কোন রাজাকার বা কম বয়সী অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কোন কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অভিযোগকারীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চাঁদ কোম্পানির সেকেন্ড ইন কমান্ড রবিউস সামাদ বলেন, ‘অভিযোগে উল্লেখিত ব্যক্তিরা সকলেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পরিবারের লোক। তারা কেউ যুদ্ধ করেনি।’

এদিতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ে অনিয়মের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে গত ২২ মে দৈনিক সংবাদ এর উলিপুর প্রতিনিধি আনিছুর রহমান মিয়াজীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম ডি ফয়জার রহমানের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে উলিপুর প্রেসক্লাব মানববন্ধনের কর্মসূচি নিলে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ একই সময়ে একই জায়গায় পাল্টা কর্মসূচি নেয়।

এ নিয়ে শহরে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উত্তেজনা নিরসনে মীমাংসা বৈঠক হয়। সেখানে এ ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান ফয়জার রহমান ।

ঢাকাটাইমস/৩১মে/পিএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :