গাজীপুরের শ্রীপুরে ক্যামিকেল দিয়ে মুড়ি তৈরি

প্রকাশ | ০১ জুন ২০১৭, ০৮:৪৭

শাহান সাহাবুদ্দিন, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি

পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় রাত-দিন পাল্লা দিয়ে উৎপাদন চলছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক  (কেমিক্যাল) পদার্থ মিশিয়ে সাধারণ মুড়ির চেয়ে একটু বড় আকারের ধবধবে সাদা মুড়ি তৈরি করা হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার প্রায় অর্ধডজন মুড়ি কারখানায়।

জানা গেছে, প্রতিটি কারখানায় গড়ে ১০-১২ হাজার কেজি মুড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। মুড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি ইউরিয়া সার, সোডিয়াম সালফেট, সালফারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। কারখানাগুলো সরকারি কোনো নিয়ম-কানুনেরও তোয়াক্কা করছে না।

মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসসংলগ্ন আল-মদিনা মুড়ির মিলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে ১৪-১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। মুড়ির চাল উত্তপ্ত করার ছোট ছোট পাত্রে চাল ঢালা হচ্ছে বস্তা থেকে। এর পরপরই দুজন শ্রমিক একটি কক্ষ থেকে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি (ইউরিয়া, সোডিয়াম কার্বনেট, সালফার) এনে ওই চালে মিশিয়ে দিচ্ছে। ১৫ মিনিট চাল উত্তপ্ত করার পর রাখা হচ্ছে স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে। সেখান থেকে চোঙার সাহায্যে উত্তপ্ত বালির মধ্যে ঢেলে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই উৎপাদিত হচ্ছে সাদা ধবধবে মুড়ি।

এই কারখানার পাশেই রয়েছে আল-আমিন মুড়ির মিল, আকলিমা ফুড, মিতালী মুড়ির মিল, নিউ মিতালী মুড়ির মিল, খাঁজা মুড়ির মিলসহ কয়েকটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়ম-কানুন মানা হয় না। শুধু ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিষাক্ত খাদ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর তা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নরসিংদীতে সরবরাহ করা হয়।

কারখানার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন মাওনা চৌরাস্তার এসব কারখানা থেকে প্রায় ৩০-৪০ টন মুড়ি উৎপাদন করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন দ্বিগুণ করা হয়েছে। আল-আমিন মুড়ির মিলে গত ২৫ জানুয়ারি গাজীপুর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম অভিযান চালালে মুড়ির মিলমালিকরা তিন সদস্যের পুলিশের দলকে অবরুদ্ধ করে মারধর করেন। মুড়ি মিলগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুড়ি তৈরির একজন কারিগর বলেন, মুড়ির চালে ক্যামিকেল মেশানো হলে মুড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এতে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে মালিকের নির্দেশনায় তারা ক্যামিকেলের সংমিশ্রণে মুড়ি তৈরি করে থাকেন।

কেমিক্যাল দিয়ে মুড়ি ভাজার বিষয়ে জানতে চাইলে আল-আমিন মুড়ি মিলের মালিক আবুল কালাম সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।  

আল-মদিনা মুড়ি মিলের মালিক ইকবাল হোসেন প্রথমে সাংবাদিক দেখে বিরক্ত হলেও পরে তিনি বলেন, ‘রমজানের কারণে আমার এখানে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে ১০-১৫ জন নির্ধারিত শ্রমিক এখানে সব সময় থাকে।’ রাসায়নিক পদার্থ মিশানোর কথা তিনি অস্বীকার করেন। শুধু লবণ পানি মিশানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

শ্রীপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব কারখানা কর্তৃপক্ষ খুবই ধূর্ত। বিভিন্ন কাগজপত্র চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তদবির করে নানা ধরনের টালবাহানা করেন।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মুড়িতে ব্যবহার্য ইউরিয়া, সোডিয়াম সালফেট মানবদেহের জন্য, বিশেষ করে রমজান মাসে রোজাদারদের খালি পেটে এটা খাওয়া খুবই ক্ষতিকর।

এসব মুড়ি কারখানায় শিগগির অভিযান চালানো হবে বলে জানান শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার। তিনি বলেন, মুড়িতে বিষাক্ত ক্যামিকেলের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১জুন/মোআ)