‘মাল্টিমিডিয়া কিংডমকে গ্রাফিক্স ট্যাবের হাব বানাতে চাই’

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০১৭, ১৩:০৯

আসাদুজ্জামান
ঢাকাটাইমস

মাল্টিমিডিয়া পণ্য বিক্রি ও পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কিংডম। দেশে গ্রাফিক্স ট্যাব বিক্রি ও এর বাজার সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জুয়েল। তিনি তার ব্যবসায়ের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স ট্যাব নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ঢাকাটাইমসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

কম্পিউটার ব্যবসায় কীভাবে এলেন?

১৯৯৮ সালে একটি কম্পিউটার কোম্পানিতে সেলস এক্সিকিটিউটিভ হিসেবে কাজ করতাম। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল কম্পটেক নেটওয়ার্ক সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিমিডিয়া পণ্য নিয়েও কাজ করত। তখন ওদের ব্যবসায়িক সাফল্য দেখে আমারও উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে জাগে। বিশেষ করে মাল্টিমিডিয়া পণ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি।কেননা, ছোট বেলা থেকেই আমার শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি একটি আলাদা একটা ঝোঁক ছিল। ওখানে তিন চার বছর চাকরি করেছি। ২০০০ সালের দিকে পরিকল্পনা করলাম এবার নিজে কিছু করবো। তখন আইডিবি ভবনে মাল্টিমিডিয়া কিংডম নামে একটি আউটিলেট চালু করলাম। প্রথম থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম। কেননা, আমাদের ওই একটা শপের মধ্যেই সব মাল্টিমিডিয়া রিলেটেড পণ্য পাওয়া যেত। এখন পর্যন্তও একটা আউটলেটের মধ্যে এতগুলো মাল্টিমিডিয়া পণ্য কারো নেই।

 

শুধু মাল্টিমিডিয়া পণ্য কোনো?

ওই যে প্রথমেই বলেছি আমরা ছোট বেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতি গান বাজনার প্রতি ঝোঁক ছিল। মাল্টিমিডিয়া পণ্যের প্রতি আগ্রহের কারণেই এ ব্যবসায় আসা। আমি চেয়েছিলাম একটা জায়গায় গ্রাহক যেনো এসে সব ধরণের মাল্টিমিডিয়া পণ্য পেতে  পারেন। এবং সেই লক্ষ্যে এখনও কাজ করে যাচ্ছি।

মাল্টিমডিয়া পণ্যের তালিকায় কী কী আছে?

মাল্টিমিডিয়া পণ্যের বহর অনেক লম্বা।এর মধ্যে যেমন আছে স্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, তেমনি আছে প্রজেক্টর, গেমিং সিস্টেমস এবং গ্রাফিক্স ট্যাবলেটর মত অনেক পণ্য।

আইডিবি ছেড়ে এলিফ্যান্ট রোডে কবে থেকে ব্যবসা শুরু করলেন?

আইডিবিতে আমাদের আউটলেট ছিল ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ওখানেকার কিছু টেকনিক্যাল কারণে ওই আউটলেটটা গোটাতে হয়। এর পর কিছুদিন মাল্টিমিডিয়া কিংডমের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।  এরপর ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে মাল্টিপ্লান সেন্টারে একই নামে ব্যবসা শুরু করি।

অনলাইন ব্যবসায় কীভাবে  এলেন?

২০০৮ সালের দিকে এদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন মনে হলো এই ফেসবুক ব্যবহার করে আমার ব্যবসটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। তখন থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করি।

আপনাদের ক্রেতারা কারা?

আমাদের ক্রেতা শ্রেণি কিছুটা আলাদ। এরা শৌখিন। যেমন শিল্পী, যারা সংগীতপ্রেমী ও সংগীতশিল্পী এবং তরুণরা আমাদের ক্রেতা। এছাড়াও আমরা যেহেতু গ্রাফিক্স ট্যাব বিক্রি করি তাই চারুকলাসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্রেতা।

আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা বা কৌশলট কী?

আমি ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলিতে বিজনেস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার শপে প্রতিদিন অনেক বিক্রি হতে হবে এমন নয়। আমি চেষ্টা করি ক্রেতা শ্রেণী তৈরি করতে এবং তাদের ধরে রাখতে। ফলে এসব ক্রেতার আমার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে বারবার আসেন। এদের কাছে পণ্য বিক্রির ঝক্কিও কম। কেননা, এর দরকষাকষি কম করেন। তার বিশ্বাস করেন মাল্টিমিডিয়া কিংডম ন্যায্যমূলে পণ্য বিক্রি করে। এখানে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কম। আমি মনে করে আমাদের দোকানে এসে যেনে ক্রেতারা সঠিক তথ্য পায়। এজন্য আমি ও আমার বিক্রয়কর্মীরা তথ্য সমৃদ্ধ থাকার চেষ্টা করি।

আপনার মাল্টিমিডিয়া পণ্যের বহরে গ্রাফিক্স ট্যাব কীভাবে যুক্ত হলো?

২০০৭-২০০৮ সালের দিকে আমরা যখন মাল্টিপ্লান সেন্টারে আউটলেট চালু করি তখন তখন আমি জিনিয়াস নামের একটি গ্রাফিক্স ট্যাব বিক্রি করতাম। এরপর থেকে ক্রেতারা  এই ট্যাবের আনুসঙ্গিক পণ্য যেমন কলম,যেটাকে স্টাইলাস বলে সেটা চাইতো। দেখলাম মাকের্টে গ্রাফিক্স ট্যাবের এই এক্সেসরিজগুলো কারো কাছেই নেই।  তখন  থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রাফিক্স ট্যাবলেট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ট্যাবের তথ্য সংগ্রহ শুরু করলাম। তাদের সঙ্গে ই-মেইল কিংবা ফোনে যোগাযোগ শুরু করলাম। এভাবে চার পাঁচটি গ্রাফিক্স ট্যাব নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে পরিবেশক নিযুক্ত হয়েছি।

একই সঙ্গে একাধিক গ্রাফিক্স ট্যাব নির্মাতা  প্রতিষ্ঠানের দেশিয় পরিবেশক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল কী?

প্রতিবন্ধকতা তো ছিলই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বলতো যে বাংলাদেশে মাল্টিমিডিয়া কিংডম যেকোন একটা ব্র্যান্ডের পরিবেশক হতে পারবে। তখন আমি তাদের বললাম, মাল্টিমিডিয়া কিংডমকে গ্রাফিক্স ট্যাবের হাব বানাতে চাচ্ছি। যেখানে আসলে ক্রেতারা তাদের পছন্দসই ব্র্যান্ডের গ্রাফিক্স ট্যাব বেছে নিতে পারবেন। এখন আমরা হুইন, এক্সপি পেন, আর্টিসুলের মত পণ্য পরিবেশন করছি। ক্রেতাদের যেটি পছন্দ তারা সেটিই কিনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে গ্রাফিক্স ট্যাবের বাজার কতটা?

দেশে গ্রাফিক্সট্যাবের বাজারটা মাত্র শুরু হয়েছে। বলা যায় প্রাইমারি লেভেলে আছে। এখনও বাংলাদেশে যারা গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করে তারা কম্পিউটারে ফটোশপ নির্ভর কাজই করে। ফলে কম্পিউটারই তাদের ভরসা। যদিও এরা এক্সপার্ট। গ্রাফিক্স ট্যাবটা লাগে মূলত যারা ক্যারেক্টার বা এনিমেশন রিলেটেড কাজ করে তাদের জন্য। কার্টুন যারা আঁকেন তাদের জন্য গ্রাফিক্স ট্যাব দরকার। কেননা, এই ট্যাব নিয়ে কার্টুনিস্ট খুব মজা করে আঁকতে পারেন। সংবাদপত্র ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এখন যেমন একটা পেশা তেমনি কার্টুনিস্টরাও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। তাই  আমি করে গ্রাফিক্স ট্যাবলেটের বাজার বিশাল।

গ্রাফিক্স ট্যাবের দাম কেমন?

আমাদের কাছে চার হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা দামের গ্রাফিক্স ট্যাব আছে। আমাদের কাছে পাঁচটি ব্র্যান্ডের ৭৫ থেকে ৮০ টি আইটেমের গ্রাফিক্স ট্যাব আছে।মডেলে ভেদে এগুলোর দামও ভিন্ন ভিন্ন।

কয় ধরণের গ্রাফিক্স ট্যাব বাজারে পাওয়া যায়?

বাজারে মূলত তিন ধরনের গ্রাফিক্স ট্যাব পাওয়া যায়। প্রথমটা হলো পেন ট্যাবলেট, আরেকটা পেন ডিসপ্লে। শেষটি হলো পেন কম্পেনিয়ন।

শিক্ষার্থীদের জন্য ট্যাবে কোনো ছাড় দিচ্ছেন কীনা?

হ্যা শিক্ষার্থীদের আমরা ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। আটিসুল, এক্সপি পেন এবং হুইন এই তিনটি ব্র্যান্ডের ট্যাবে শিক্ষার্থীরা এই ছাড় পাবেন। তবে তাদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। অন্যদিকে রবির গ্রাহকরা ধন্যবাদ অফারের আওতায় ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন।

সারা দেশে গ্রাফিক্স ট্যাবের চাহিদা তৈরি ও এর প্রচারে জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

অফ লাইনের পাশাপাশি আমরা অনলাইনেও প্রচারণা চালাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। যেখানে আমাদের পণ্য বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সেখানে থেকে ক্রেতারা ফরমায়েশ দিতে পারবেন। হোম ডেলিভারি সুবিধা নিতে পারবেন। এজন্য কোনো ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে না। ঢাকার বাইরেও এই সুবিধা রয়েছে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি আমরা ফেসবুকেও প্রচারণা চালাচ্ছি। ইউটিউবেও আমরা প্রতিটি পণ্যের রিভিউ প্রকাশ করছি।

সময় দেয়ার জন্য আপানাকে ধন্যবাদ

আপনাকে ও ঢাকাটাইমকেও ধন্যবাদ।

ছবি: আফরোজ ইসলাম

(ঢাকাটাইমস/৫জুন/ এজেড)