শিক্ষকের যৌন হয়রানি: ফুঁসে উঠছে দানেশের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর থেকে
 | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০১৭, ১৫:১৯

দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার প্রতিবাদে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠেছে। এ নিয়ে আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১ থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী চলে এ মানববন্ধন। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তার কুশপুতুল দাহ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে রিপোর্ট পেশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। ফলে ইংরেজি বিভাগের ওই শিক্ষক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ইংরেজি বিভাগের লেভেল-৩ এর ছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগে উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্রীদের তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেন। বাধ্য করেন অনৈতিক কাজে। প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। কখনো মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে কুপ্রস্তাব দেন। এসবে রাজি না হলে পরীক্ষায় ফেল করে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমি তাকে খুশি করার জন্য অনৈতিক এবং অসৎ কাজ করবো না। শিক্ষকের উত্তর ছিল কখনো কখনো ভালো কিছু পেতে হলে অনৈতিক এবং অসৎ কাজ করতে হয়্।

এই শিক্ষক এ ধরনের ফাঁদ পেতে চার ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এ কাজের জন্য ওই শিক্ষক বাঁশের হাট এলাকায় রানীগঞ্জ মোড় থেকে ১০০ গজ দূরে সাঁওতালদের কবরস্থনের পাশে একটি ঘর ভাড়া নেন। সবার আড়ালে এখানে শিক্ষক দীপক কুমার সরকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়া গড়ে তুলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

দিনের পর দিন এসব ঘটনা প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৪ সেপ্টেম্বরে লিখিত অভিযোগের পর বিভাগীয় প্রধান ডিন ড. ফাহিমা খানম ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠান।

অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোস্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিস অনুষদের ডিন ড. ফাহিমা খানমকে চেয়ারম্যান এবং সহকারী প্রফেসর শফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, প্রফেসর ড. বলরাম রায়, প্রফেসর ড, এটিএম শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড, হারনুর রশিদ। তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষক্ষের কাছে জমা দেয়।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রফেসর শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়গুলো সত্যতা পাওয়া গেছে বলে স্বীকার করেন।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে শিক্ষক দীপক কুমার সরকার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু আবুল কাসেমের সঙ্গে যোগাযাগ করা হলে তিনি জানান, আমার যোগদানের আগে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি অবহিত হয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/এসএএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :