আগামী নির্বাচনে জয়ের বিকল্প নাই: খালিদ মাহমুদ

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০১৭, ০৮:৩০

অনলাইন ডেস্ক

টানা দুবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য টানা তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসা জরুরি বলে মনে করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে পর‌্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন খালিদ। সঙ্গে ছিলেন তানিম আহমেদ।

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কী ভাবনা আপনার?

ভোটের মাধ্যমে জয়ী হওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নাই। যদি জয়ী না হই তাহলে আমাদের যে অর্জন আছে, যে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে হাঁটলাম, সেগুলো বিসর্জন হয়ে যাবে।

কেন এমন ভাবছেন?

কারণ আমরা অতীতে দেখেছি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। শুধু সরকারের বিকল্প আরেকটা সরকার তৈরি করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে, ধর্মের নামে উন্মাদনা হয়েছে। দেশের যে মূল সেন্টিমেন্ট, মুক্তিযুদ্ধকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। কাজেই আগামী নির্বাচন হচ্ছে এসব কিছুকে রক্ষা করা।

নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

আমাদের সে রকম অন্তরায় নেই, প্রস্তুতি আছে। আমরা যে পরিমাণ প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই।

নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি কত দূর?

আমাদের ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটা গাইডলাইন দেয়া আছে। তার আগে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে যাব। সে আলোকেই আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের ইশতেহার উপস্থাপন করব। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

বিএনপি তো নির্বাচনে আসতে সহায়ক সরকার, নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি তুলছে

নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। আর বিএনপি যে কথাগুলো বলছে তাতে বোঝা যায়, বিএনপি আসলে একটি সংস্কারবাদী দল। এদের প্রত্যেকদিনই সংস্কার হচ্ছে। আজকে যেটা বলছে একমাস পরে আরেকটা বলছে। কখন কোনটা বলছে তা তারা নিজেরাই ভুলে যাচ্ছে। 

আর ২০১৪ সালে ভুলের যে খেসারত বিএনপি দিচ্ছে তাতে তবে আমার তো হচ্ছে আগামী নির্বাচনের অংশ নেয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মনে করি তারা আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের প্রক্রিয়াটা কী থাকবে?

৩০০টি আসনে আমাদের অসংখ্য প্রার্থী রয়েছে। এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে, দলের প্রশ্নে যারা ডেডিকেটেড আমাদের পার্লামেন্টরি বোর্ড তাদেরই নমিনেশন দিয়ে দিয়ে থাকে। আগামীতেও তাই হবে।

আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে?

বিরোধী দলগুলোর তো সংবাদ সম্মেলন করা ছাড়া কোনো ভূমিকা নেই। স্থানীয় অনেক ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলকে কাজ করতে হয়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নেই। সে জায়গাটাতে আওয়ামী লীগকেই বিভিন্ন পর্যায়ে একটা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। এটা করতে গিয়ে অনেক সময় সংঘাত তৈরি হচ্ছে। এটা আসলে এক ধরনের দায়িত্বশীলতার পরিচয়।

এটাকে আমি দ্বন্দ্ব নয়, প্রতিযোগিতা বলতে পারি। কারণ আমরা তো দেশের সেবা এবং কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি থাকে যে কোন কাজটার মাধ্যমে আমাদের সেবা এবং কল্যাণ হতে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এসব কথা বলতে গিয়ে পক্ষ বিপক্ষ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যখন আমরা যখন নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় নামব, তখন এসব দ্বন্দ্ব থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

আপনি বলছেন বিরোধী দলের ভূমিকাও আওয়ামী লীগকে পালন করতে হচ্ছে। আবার বিএনপি বলছে সরকার তাদেরকে ভূমিকা পালন করতে দিচ্ছে না।

গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকার কখনও বাধা দিয়েছে এমন নজির একটাও নেই। কর্মসূচির নামে তারা জ্বালাও পোড়াও করেছিল, এজন্য ভুলও স্বীকার করেনি। তাদের অগণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে দেয়াটাই কি গণতান্ত্রিক হবে? নাকি সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে অগণতান্ত্রিক, সন্ত্রাসী, জঙ্গি কর্মকাণ্ড নির্মূল করা? আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার যদি বিএনপি অগণতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করে তবে তা সঠিক।

একটা জিনিস লক্ষ্য রাখবেন, বিএনপির সম্প্রতিক কোনো গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না, ছিল ধ্বংসাত্মক। বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিরোধিতা করে বিএনপির পক্ষ থেকে বিরুপ মন্তব্য করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, জঙ্গি সাজিয়ে অভিযান করা হচ্ছে। এগুলোকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে বিশৃঙ্খল কর্মসূচি দিয়েছিলো তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

বলা হচ্ছে সরকার হেফাজতের সঙ্গে আপস করেছে।

সমঝোতা আর আপস এক জিনিস না। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাই সেখানে কিছু বিষয় আছে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকার যদি সকল জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসে তা কিন্তু আপস করার বিষয় না।

মানুষের নিজস্ব অনুভূতি এবং মতামত রয়েছে, বিশ্বাস রয়েছে, তা নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি করলে দেশে বিশৃঙ্খলা হবে। সরকার চাচ্ছে সবার মতামত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান মেনে দেশটাকে এগিয়ে নিতে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আওয়ামী লীগ সরে গেছে, এটা বলা হাস্যকর। ধর্ম পালন করা কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা না। সাম্প্রদায়িকতার অর্থ হচ্ছে একে অপরের সাথে হানাহানি, কাটাকাটি। আমরা যেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ দেখছি সেখানেই প্রতিরোধ করেছি। আর যখন হেফাজত বলেছিল ইসলামের জন্য তারা আন্দোলন করেছিল, তখন তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক পোলারাইজেশন হয়ে গেছে, তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে গুটিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের সঙ্গে আপস করা হয়নি।

কওমি মাদ্রসার স্বীকৃতির বিষয়টি?

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা যদি একটা বিষয়ের উপর পড়ালেখা করে সনদ পাই তাহলে একটা ধর্মীয় বিষয়ের উপর পড়ালেখা করে তারা কেন পাবে না? সরকার মনে করেছে তাদেরও স্বীকৃতির দরকার আছে। কোন বাবা-মা তো তাঁর সন্তানকে অস্বীকার করতে পারে না।

আওয়ামী লীগকে কেন ইসলামিক ফোরাম করতে হবে?

ইসলামিক ফোরাম আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে। কিছু কিছু ইসলামিক দল, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ইসলামের সঠিক ধারাটাকে আমরা যেন সঠিকভাবে প্রচার এবং পালন করতে পারি সেজন্য একটি ফ্রন্ট প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

ওলামা লীগের তাহলে কী হবে?

ওলামা লীগ কখনই আমাদের কোন সহযোগী সংগঠন ছিল না। ২০০১ সালের পর জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সোচ্চার ছিল। খালেদা-নিজামী সরকার ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি,এখানে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং মূল চরিত্র থেকে সরে এসেছে। তখনই আমরা তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছি।

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

দেশের কল্যাণেই আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ আকারের বাজেট পেশ করেছে। এ বাজেটের সুফল পাবে তৃণমূলের অসহায় মানুষ। এ বছর থেকে তৃণমূলে বিভিন্ন ভাতা ও স্বাস্থ্য সেবা বাড়বে।

বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের কল্যাণ সাধিত হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।সরকার নিত্যপণ্যের ওপর কোনো রকম ভ্যাট বা করারোপ করেনি।

আবগারি শুল্ক ও সারচার্জ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে

বাজেট একটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা থাকবেই। সংসদেও এমপিরা এর পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। এ বক্তব্যগুলো অর্থমন্ত্রণালয়ের লোকজন নোট করছে। ফাইনালি সংযোজন বিয়োজন করে পাস করা হবে। এটা বাজেটের নিয়মই। বাজেটের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে অর্থমন্ত্রী বাজেট পাস করার সময় তা আমলে নিবেন।

বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে

গত আট বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তার জন্য বাজেট নিয়ে বিএনপির এ সমালোচনা মানায় না। বরং তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের দুর্নীতি, হত্যা, নৈরাজ্য এবং জঙ্গিবাদ কায়েমের চেষ্টার সমালোচনা করা উচিত।

ঢাকাটাইমস/০৭জুন/টিএ/ডব্লিউবি