বাড়ি ফিরে পেতে হাইকোর্টে মওদুদের রিট

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০১৭, ১২:৩৭ | আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭, ১৩:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিনা নোটিশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক  বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এ রিট আবেদন করেন। আজই বিচারপতি সৈয়দ মো.দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সম্বনয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

মওদুদ আহমেদের জুনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বাড়ি থেকে বিনা নোটিশে উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আজ সকালে রিটটি করা হয়েছে। দুপুর ২টার বিরতির পরে রিট আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

গত ৪ জুন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ থেকে মওদুদ আহমেদের করা রিভিউ খারিজ হয়ে যায়। তবে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে গতকাল বুধবার রাজউক গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর প্লটের  ওই বাড়িটির কতৃত্ব নিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। বাড়িটি থেকে মওদুদ আহমদের ব্যব্হৃত জিনিসপত্র বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। 

রাজউক অঞ্চল-৫ এর পরিচালক ওয়ালিউর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত করার অভিযান করা হয়। বিকাল ৪টা নাগাদ তারা বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটে এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির ওপর ওই বাড়ি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ২৬ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দিলে ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক তা আমলে নেন।

অভিযোগে বলা হয়, গুলশানের যে বাড়িটিতে মওদুদ আহমদ ও তার পরিবার থাকছেন, তার প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে এই বাড়ির মালিকানা এহসান পান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। এরপর ১৯৭৩ সালের ২ অগাস্ট তারিখে তিনি ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে একটি ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করান এবং নিজেকে তার ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

দুদকের মামলায় বলা হয়, জিয়ার সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মওদুদ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গুলশানের ওই বাড়ি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর ধারাবাহিকতায় মাত্র ১০০ টাকা মূল্য দেখিয়ে ১৯৮০ সালে প্লটটি তিনি বরাদ্দ নেন। পরে তিনি একটি বায়নানামা ‘হাজির করেন’, যেখানে দেখানো হয়, ওই বাড়ির মালিক ইনজে মারিয়া প্লাজ জনৈক মহসিন দরবারকে আমমোক্তার বানিয়েছেন এবং সেই মহসিন দরবার ১৯৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদের নামে বায়না করে দিয়েছেন। মওদুদ ওই অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গতবছর ২৩ জুন হাই কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ আপিলের আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। এ বিষয়ে দুদকের রিভিউ আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মওদুদ ও তার ভাই।

জানা গেছে, অস্ট্রীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজ ১৯৮৪ সালের ২৫ জুন বাড়ির বিষয়ে মহসিন দরবার নামের এক ব্যক্তিকে কথিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দেন। রাষ্ট্রপক্ষের নথিপত্রে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ ওই অস্ট্রীয় নাগরিক মারা যান। অথচ মামলাকারীপক্ষ (মওদুদের ভাই) তাদের নথিতে দেখায়, বাড়ি নিয়ে ওই বছরের ১০ অগাস্ট তাদের মধ্যে বায়নানামা চুক্তি হয়। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মামলা করেন মওদুদ আহমদের ভাই। ১৯৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি তৎকালীন সাব জজ আদালত মামলাটি খারিজ হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর হাই কোর্টে প্রথম আপিল করেন মওদুদ আহমদের ভাই, যার ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রায় দেয়।

(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/এমএবি/জেডএ)