অন্যদের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে লাভ বেশি

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০১৭, ১৮:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদত, ঢাকাটাইমস

সাধারণ ব্যাংকিংএর তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মুনাফা বেশি হয় বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় সাধারণ ব্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১.৯ টাকা মুনাফা করে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে সেটি প্রায় দ্বিগুণ, ৩.৬ টাকা। একইভাবে মোট সম্পদের বিপরীতে সাধারণ ব্যাংকিংয়ে আয় ৫.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ৭.৩ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) ভবনে ‘ইসলামী ব্যাংকিং অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই কথা উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।

বিআইবিএম বলছে, ইসলামী ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণের হার অনেক কম। ২০১৬ সালে অন্যান্য সাধারণ ব্যাংকিং এ খেলাপি ঋণের হার যেখানে ৯.২ শতাংশ সেখানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে তা ৪.৩ শতাংশ।

বিআইবিএমের বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মোট ১৯.৪ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকিং। যেখানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০ নম্বরে অবস্থান করছে। যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুদান ও ইরান। তারা শতভাগ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চলছে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের অবস্থান চতুর্থ। যাদের ৫১ দশমিক ১ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকিং। এই র‌্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ১৩ নম্বরে।

কর্মশালায় ইসলামী ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর উপর মত দেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান। তিনি বলেন, ‘এইসেক্টরে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতেও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।’

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো আইন নেই জানিয়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জঙ্গি অর্থায়নের অপপ্রচার। এছাড়া ‘ইসলামী ব্যাংকিং অ্যাক্ট’ না থাকা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং সেবার বহুমুখীকরণের অভাবও এই খাতের অন্যতম বাধা।

প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান।

কর্মশালায় বলা হয়, জঙ্গি অর্থায়নের অপপ্রচার সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে শতভাগ সচ্ছতা এবং গাইডলাইন মেনে চলতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সেমিনারে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে আরও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক মো. আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় যে, ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি প্রফেশনাল না হয়ে ধর্মীয়ভিক্তিক হয়ে যায়। এটা ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘যেসসব ব্যাংকে শরিয়া কাউন্সিল শক্তিশালী নয়, সেসব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন কঠিন।’

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারী অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এত বছরেও ইসলামী ব্যাংকিং এ কোনো আইন নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আদলে ইসলামী ব্যাংকিং আইন করতে হবে। যাতে সব ব্যাংক এক প্লাটফর্মের নিচে আসতে পারে।’

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশকিছু ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর শরিয়া কাউন্সিলের সদস্যদের ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা দুটোই কম।’

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং মূলত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়া হয়। তবে অনেকে এ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের ধোঁকা দিচ্ছে। এ ধরণের কার্যক্রম ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।’

ঢাকাটাইমস/০৮জুন/জেআর/ডব্লিউবি