ট্রলার মালিকদের মুনাফার লোভে সাগরে মরছে জেলে

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৭, ০৯:০৬

বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

সাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে জেলে নিখোঁজের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। প্রায়ই নিখোঁজ কিংবা মৃত্যু ঘটছে অনেক জেলের। এ ব্যাপারে সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি ট্রলার মালিকদের মুনাফার লোভের প্রতিও আঙুল উঠছে।

তারা বলছেন, সচেতনতামূলক প্রচারণা ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সতর্কতা সংকেত প্রচার করার পরও তা না মানার কারণে জেলেদের নিখোঁজের হার বাড়ছে। আর মুনাফালোভী ফিশিং ট্রলার মালিকদের কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলেদের সাগরে যেতে হয়, থাকতে হয়। এতে অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে কেউ নিখোঁজ হয়, আবার কারো ভাগ্যে নামে মৃত্যু।

অভিযোগ উঠেছে, এসব বিষয়ে ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ট্রলার মালিকদের একাধিকবার অনুরোধ করার পরও তারা তাতে সাড়া দেয়নি।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় সাগরে ফিশিং ট্রলারডুবির ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসা কয়েকজন জেলের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মোস্তাক আহমদ নামের এক ট্রলারমাঝি জানান, মালিকপক্ষের চাপের কারণে অনেক ট্রলার সাগরে থেকে যেতে হয়। একটি ট্রলার না এলে অন্য ট্রলারও ফিরতে চায় না। কাউকে ফেলে রেখে ফিরে না আসা একরকম রীতি হয়ে আছে।

ট্রলারমাঝি মোস্তাক আহমদ জানান, সামান্য একটি জালের জন্য প্রাণ দিতে হয় জেলেদের। একটি জালের দাম ৩৫ হাজার টাকার মতো। মালিকপক্ষ থেকে ওই জাল ফেলে না আসার নির্দেশ থাকায় জেলেরা চাইলেও ফিরে আসতে পারে না। অনেক সময় একটি রশির জন্য ট্রলারডুবিতে জেলের মৃত্যু হয়।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম মাঝি জানান, ট্রলার মালিকদের অনেকেই শ্রমিকদের সাগরে থাকতে বাধ্য করেন। তারা কোনো সতর্কসংকেত ও সরকারি নির্দেশনা মানে না। আবার তাদের নির্দেশ অমান্য করে ট্রলার ফিরে এলে শ্রমিকদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয় তেলসহ যাবতীয় খরচের টাকা। ফলে বাধ্য হয় সাগরে থেকে যেতে হয় শ্যমিকদের।

যদি সতর্কসংকেত অনুযায়ী প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, মালিকপক্ষ আর খোঁজ নেন না শ্রমিকদের। নিজের ট্রলার ডুবে গেলেও তারা অনেক সময় আইনগত ঝামেলা এড়াতে তা অস্বীকার করে।

মালিকপক্ষের বেপরোয়া হওয়ার আর এক কারণ সস্তায় রোহিঙ্গা শ্রমিক পাওয়া। এতে দেশীয় শ্রমিকরা চাপে পড়েছেন। মালিকপক্ষের কথা না শুনলে দ্রুত ওই শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। নেয়া হয় রোহিঙ্গা শ্রমিক।

জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, শ্রমিকদের ওপর কোনো মালিক চাপ প্রয়োগ করে এ রকম অভিযোগ কেউ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশনা মানা সবার জন্য বাধ্যতামূলক বলে জানান তিনি।

জেলা উপকূলীয় ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের জানান, সমিতিভুক্ত সব ট্রলারের শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, কোনো ধরনের  সমস্যা হলে তারা যেন দ্রুত উপকূলে চলে আসে।

(ঢাকাটাইমস/৯জুন/মোআ)