স্বপ্ন পূরণের পথে কামারগ্রামের টিটিসি

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৭, ১৪:০৪ | আপডেট: ১২ জুন ২০১৭, ১৪:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক পাইলিং চলছে। এই কাজ শেষ হলে লোড টেস্টের পর মূল পাইলিং কাজ শুরু হবে। গত ২৯ মার্চ ফরিদপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তার মাস খানেকের মাথায় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি বাড়ানোর জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন উপজেলা ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে নির্মিত হচ্ছে মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এ সবই একটি প্রকল্পের অধীনে।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে বড় আকারের এই প্রকল্পটি হাতে নেন। বিদেশে শ্রম বাজারে দক্ষকর্মীর চাহিদার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তিনি উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ৪০টি টিটিসি ও একটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রকল্প অনুমোদন পায়।

আলফাডাঙ্গায় টিটিসি নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী। ১৯৩৭ সালে মরহুম কাঞ্চন মুন্সী এই একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, কবরস্থান, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে। আলফাডাঙ্গার উন্নয়নে মুন্সী পরিবারের অবদান মানুষের মুখে মুখে। মুন্সী পরিবারে উত্তরসূরী কাঞ্চন মুন্সীর প্রপৌত্র আরিফুর রহমান দোলনের নেতৃত্বে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামাগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এটি অব্যাহত আছে। ৭০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিতব্য টিটিসিটিও তাঁরই প্রচেষ্টার ফল।  

টিটিসি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের গণপূর্ত বিভাগ। জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মানিক লাল দাশ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গত মাসের শেষ দিকে আমরা আলফাডাঙ্গার কামারগ্রামে টিটিসির নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে ঠিকাদারদের প্রকল্পের লে আউট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক পাইলিং কাজ চলছে। এ পর্যন্ত একাডেমিক ভবনের দুটো পরীক্ষামূলক পাইলিং ঢালাই দেয়া হয়েছে। এগুলো শক্ত হলে লোড টেস্ট করা হবে। মাটি ঠিকমতো ভার নিতে পারছে কি-না তা দেখে সার্ভিসিং পাইলের কাজ শুরু হবে।’ তিনি জানান, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দু-বছরের মতো সময় লাগবে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে টিটিসি নির্মিত হচ্ছে সেই জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে। জানতে চাইলে ওই কাজে নিয়োজিত একজন প্রকৌশলী জানান, বৃষ্টির কারণে পাইলিংগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তাই বালু ফেলে উঁচু করার চেষ্টা চলছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী মানিক লাল দাশ ঢাকাটাইমসকে জানান, ট্রেনিং সেন্টারটিতে তিনটি ভবন থাকবে। একটি একাডেমিক ভবন, একটি ডরমেটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও ছাত্রী হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হবে। ডরমেটরিতে থাকবে ছাত্ররা। প্রিন্সিপালদের আবাসিক কোয়ার্টারের উপরে ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।   

প্রথম পর্যায়ে ৪০টি উপজেলায় টিটিসি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। চট্টগ্রামের একটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটও আছে এই প্রকল্পে। প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া ৪০টি টিটিসির মধ্যে একটি অনুমোদিত হয় আলফাডাঙ্গার জন্য।

এ বিষয়ে ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক বিশ্বাস মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আলফাডাঙ্গার টিটিসি নির্মাণের জন্য জমিঅধিগ্রহণ ও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা এ কাজগুলো করেছি। এখন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ।’

এলাকাবাসী মনে করছেন, আলফাডাঙ্গার টিটিসি শুধু এই উপজেলায়ই নয় পাশের দুই উপজেলা বোয়ালমারী ও মধুখালীতেও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। আশপাশের জেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে কারিগরি শিক্ষার নিতে আসতে পারবে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই টিটিসি নির্মাণের পেছনে বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল। তা না হলে এত বড় প্রকল্প আলফাডাঙ্গাবাসী পেত না। পাশাপাশি আলফাডাঙ্গার সন্তান আরিফুর রহমান দোলনের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ছিল। তিনি তার যোগাযোগ-সম্পর্কের মাধ্যমে ৪০টি টিটিসির একটি আলফাডাঙ্গায় এনেছেন। এজন্য তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

টিটিসি নির্মিত হলে শুধু কারিগারি শিক্ষার প্রসারই নয়, গোটা আলফাডাঙ্গার আর্থিক অগ্রগতিও হবে। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। একে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্নও দেখছেন স্থানীয়রা। কামারগ্রামের গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি খান আমিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টিটিসি নির্মিত হলে এই অঞ্চলের মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য লোকের সমাগম বাড়বে। এতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।’

২-নং গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইনামুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গোটা আলফাডাঙ্গায় শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী। তারই উত্তরসুরী আরিফুর রহমান দোলন প্রপিতামহের দেখানো পথে হাঁটছেন। আলফাডাঙ্গায় (কামারগ্রাম) নির্মিতব্য টিটিসি বরাদ্দের পেছনে তার দৌড়ঝাঁপের কথা সবাই জানে।’

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র ঢাকাটাইমসকে  জানায়, ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে দুটি হচ্ছে ফরিদপুর জেলায়। একটি আলফাডাঙ্গায় অন্যটি নগরকান্দা উপজেলায়।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একটি টিটিসি স্থাপিত হবে। এছাড়া বরিশালের গৌরনদী, পটুয়াখালীর দশমিনা, চাঁদপুর সদর, চট্টগ্রাম সদর, রাউজান ও সন্দীপ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও দাউকান্দি, কক্সবাজারের রামু, গাজীপুরের কাপাসিয়া, জামালপুরের মেলান্দহ, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মুন্সীগঞ্জের সদর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নারায়ণগঞ্জ সদর, শেরপুর সদর, টাঙ্গাইলের কালিহাতি, নাগরপুর, নরসিংদীর মনোহরদি, বাগেরহাটে চিতলমারী, যশোরের কেশবপুর, খুলনার দিঘলিয়া ও পাইকগাছা, নওগাঁর রাণীনগর, নাটোরের সিংড়ায়, পাবনার সুজানগরে, রাজশাহীর মোহনপুর, সিরাজগঞ্জের সদর ও কামারখন্দ, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, রংপুরের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের খানসামা, হবিগঞ্জ সদরে, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে টিটিসি নির্মিত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে হবে একটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট।

ঢাকাটাইমস/১২জুন/এইচএফ/ডব্লিউবি