ডিএনডিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা,চরম দুর্ভোগ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০১৭, ২২:০৪

বঙ্গপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দুই দিন ধরে টানা বর্ষণে (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) ডিএনডি বাঁধের ভেতরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বিশেষ করে ডিএনডির নিচু এলাকার বহু বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ, সবজি ক্ষেত ও নার্সারিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বর্ষণের কারণে দেড় থেকে দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে।

ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডিএনডিতে এ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জলাবদ্ধতার শিকার লোকজন অভিযোগ করেন। ডিএনডির অভ্যন্তরে এখনও স্থান ভেদে দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। তবে শিমরাইল পাম্প হাউজের কর্মকর্তাদের দাবি পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আর্বজনার কারণে ডিএনডির ক্যানেল দিয়ে সেচ খালে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই কারণে চারটি পাম্প চালানো যাচ্ছে না।

ডিএনডির অভ্যন্তরের ফতুল্লা পিলকুনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার, সোলায়মান মিয়া, মোহাম্মদ কাসেম মিয়া জানান, রবিবার রাত থেকে সোমবার দিনভর হালকা ও ভারী বর্ষণের পানিতে ডিএনডির প্রজেক্ট অভ্যন্তরের নিচু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সাধারণত নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মসজিদ- মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে গেছে। ময়লা-আবর্জনা ও নর্দমার সঙ্গে বৃষ্টি পানি মিশে একাকার হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ রোজাদাররা চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছে।

বর্ষণের ফলে মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, মাতুইয়াল, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভূইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, মাতুয়াইল, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, নয়াপাড়া ও ধনকুন্ডাসহ বিভিন্ন নিচু এলাকার অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, নার্সারি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাইনাদী শাপলা চত্বর এলাকায় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, গত দু-দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণের পানিতে শাপলা চত্বর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।

এদিকে সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ডিএনডি পাম্প হাউজে সরেজমিন গিয়ে চারটি পাম্পের মধ্যে দুটি পাম্প চলতে দেখা গেছে। বাকি দুটি পাম্প বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে শিমরাইলের পাম্প হাউজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার ডিএনডি প্রজেক্টে জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানান, ডিএনডির নিষ্কাশনে খালে পানির স্রোতের সঙ্গে আবর্জনা এসে পাম্পের মুখে জমতে থাকায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে এক সঙ্গে চারটি পাম্প চালানো যাচ্ছে না।

সোমবার আমরা তিনটি পাম্প চালু রেখেছি। তবে মাঝে মধ্যে একটি পাম্প বন্ধ রেখে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে আবারও বন্ধ পাম্পটি চালু রাখতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সোমবার পাম্প হাউজের পাম্প চালু থাকা অবস্থায় পানির উচ্চতা ছিল ২ দশমিক ৯ মিটারে। আবার পাম্প বন্ধ থাকায় অবস্থায় ৩ দশমিক ৫ মিটারে চলে আসে। যা শুষ্ক মৌসুমে পানির উচ্চতা থাকে ২ দশমিক ৫ মিটার।

পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব জানান, ডিএনডির প্রধান নিষ্কাশন খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। খালে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা এসে জমা হচ্ছে। তা আবার পরিষ্কার করে পাম্প চালাতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৫-৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকার ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ডিএনডি বাঁধটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশ পানিতে ডুবলেও ডিএনডি ছিল বন্যামুক্ত। ফলে ডিএনডিতে এরপর বাড়িঘর, মিলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। বর্তমানে ডিএনডিতে ২০ লাখ লোক বসবাস করছে বলে অনেকে মনে করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :