পদত্যাগ করেও বিএনপিতে ফিরতে আগ্রহী আজিম

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৭, ০৮:৩১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আনোয়ারুল আজিম। তবে দলে ফেরার আগ্রহও রয়েছে তার। কিছু শর্ত মানলেই আবার বিএনপিতে ফিরতে চান তিনি।

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০০১ সালে দলের টিকিটে  কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। হঠাৎ করে তার এমন সিদ্ধান্তে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অবাক হয়েছেন।

আনোয়ারুল আজিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে  জানা গেছে, পদত্যাগের আগে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার এলাকায় দলীয় কোন্দল নিয়ে অভিযোগের কথা জানিয়েছিলেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় নিজে থেকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

জানা গেছে, দলের লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার কোন্দল নিরসনে দলের চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপ চান আনোয়ারুল আজিম। একইসঙ্গে চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনবির্বেচনার নির্দেশনা আসলে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে তার আপত্তি নেই।

ঢাকাটাইমসকে আজিম বলেন, ‘আমার নেত্রী তো বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আমাকে যা বলবেন আমি তাই করব। ভিন্ন কিছু করার কোনো সুযোগ নেই।’

গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আনোয়ারুল আজিম। একইসঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য পদও ছেড়ে দেন তিনি।

তার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাকসাম বিএনপিতে দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এর কারণ। সম্প্রতি লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা যুবদল-ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের অনুসারীদের আধিক্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিগত আন্দোলনে সংগ্রামে ছিলেন, একাধিক মামলার আসামি যেসব নেতাকর্মী আছে তাদের কমিটিতে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করে আসছেন আজিমের সমর্থকরা।

এই কমিটিকে পকেট কমিটি ও গঠনতন্ত্র বিরোধী আখ্যা দিয়ে মাঠের কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন আনোয়ারুল আজিম। তার সঙ্গে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের প্রায় শতাধিক নেতাও একসঙ্গে পদত্যাগ করেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আনোয়ারুল আজিম ও আবুল কালামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কালাম গ্রুপ অনেকটা দুর্বল হয়ে আজিম গ্রুপের সঙ্গে মিলে যায়। তারপরও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কালামের সমর্থকরা ধানের শীষে ভোট দেয়নি বলে খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। যে কারণে দল থেকে কালামকে সেই সময় সরিয়ে দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে ৪৫৮ ভোটে হেরেছিলেন আজিম।

বিভিন্ন সময় কেউ পদত্যাগ করলে তাকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য কেন্দ্রের তৎপরতা চোখে পড়ে। কিন্তু আজিমের ক্ষেত্রে এমন কোনো উদ্যোগ নেননি কেন্দ্রীয় নেতারা।

পদত্যাগের বিষয়ে কথা বললে ঢাকাটাইমসকে আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘আমি চিন্তা করেছি নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে তিনি (আবুল কালাম) যেভাবে বেআইনিভাবে ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি করেছেন এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা আমাকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্যও বলছেন। কিন্তু আমি এখনো এমন চিন্তা করিনি।’

কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজিম ভাই হঠাৎ করে পদত্যাগ করলেন এটা দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতির কারণ হবে। কিন্তু তার পদত্যাগের বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার নয়।’

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/বিইউ/ডব্লিউবি)