গার্মেন্টস এক্সেসরিজে উৎসে কর মওকুফের দাবি

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৭, ১৯:৫৪ | আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭, ২২:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রপ্তানিমুখী শিল্পের স্বার্থে উৎসে আয় কর মওকুফের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। আগামী দুই বছরের জন্য এই কর মওকুফের দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বিজিএমপিএমইএ আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি করেন তিনি।

আবদুল কাদের খান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের মতো এই খাতের পরিপূরক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের কর্পোরেট কমানো, উৎসে কর মওকুফ করার সুপারিশ করছি। একই সঙ্গে এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোক্তাদের সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেয়া এবং এই খাতে পাঁচ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদানে আমরা সুপারিশ করছি।’

বিজিএপিএমইএ সভাপতি বলেন, বাজেট ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতসহ এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করে আব্দুল কাদের খান বলেন, এই খাতের কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ। অথচ এ খাত তৈরি পোশাক খাতের পরিপূরক খাত। এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এই খাতের আন্তর্জাতিক বাজার ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার মধ্যে বাংলাদেশ ৬.১২ শতাংশ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা হয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। বিজিএমইএ ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে। সরকারের এ ভিশন অর্জন করতে হলে ২০২১ সালের মধ্যে এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করতে হবে।

তিনি বলেন, এই খাতে কর্পোরেট কর কমানো না হলে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি সম্ভব হবে না। নতুন বিনিয়োগ ও পুন:বিনিয়োগ আসবে না। এছাড়া নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। ফলে সরকার আগামী অর্থবছর যে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জিত হবে না বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

বিজিএপিএমইএ সভাপতি বলেন, রপ্তানিমুখী কারখানা তৈরির ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি ছাড়া ক্রেতারা কাজ দিতে চায় না। কমপ্লায়েন্স এর পেছনে ব্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, ‘পোশাকের দরপতন হচ্ছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজার এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কায় নগদ সহায়তা চেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে তৈরি পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে নগদ সহায়তা পেয়ে আসছে। তৈরি পোশাক খাতের পরিপূরক খাত হিসেবে ও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য এ খাতের জন্য ৫% শতাংশ নগদ সহায়তা দেবার সুপারিশ করেন তিনি। একইসঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তাদের দুই বছরের জন্য উৎসে কর মওকুফ ও সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণ প্রদানের সুপারিশও করেন।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের দ্বিতীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালক আবদুস সাত্তার, আবু কায়সার ভূঁইয়া, সিরাজুল ইসলাম খান, ওমর ফারুক, সচিব মোহাম্মদ সাখাওয়াত আলী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 উল্লেখ্য গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং সেক্টর তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চাৎসংযোগ শিল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০০ এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩০ এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদন করে থাকে।

উৎপাদিত পণ্যসমূহ হলো পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ইলাস্টিক, বাটন, বাটন ট্যাগ, কলার স্ট্যান্ড, বাটার ফ্লাই, লেবেল, করোগেটেড কার্টন, জিপার, হ্যাংটেগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, সুইং থ্রেড, প্রাইস ট্যাগ, ফটোবোর্ড, গামটেপ, টিস্যু, ট্যুইল টেপ, এম্ব্রয়ডারি, প্যাডিং, কুইলটিং ইত্যাদি। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান পূর্বে এসব পণ্যসমূহ বিদেশ হতে আমদানি করতো। বর্তমানে পোশাক শিল্পের পুরো চাহিদাই আমাদের সেক্টর মিটিয়ে আসছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এবং লিড টাইম কমে গিয়েছে। এছাড়ও এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যসমূহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে সরাসরি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/১৩জুন/ জেআর/জেবি/এমআর