‘ক্রিয়েটিভ কনটেন্টের মাধ্যমে ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিং করি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুন ২০১৭, ১৬:১৫ | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০১৭, ০৮:৩৪

ওয়ালটনের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের খবর সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন অগাস্টিন সুজন বাড়ৈ। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের অ্যাসিস্টান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিং ও গণযোগাযোগের বিভিন্ন বিষয়ে উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

জীবনের শুরুটা কোথায় কেটেছে?

আমার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলায়। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে বরিশালের গৌরনদী থেকে এসএসসি পাস করি। এরপর ঢাকায় আসি। এইচএসসি পড়েছি নটরডেম কলেজে। তারপর তেজগাঁও কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছি। একই বিষয়ে সরকারি বাংলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি।

কর্মজীবনের শুরুটা জানতে চাই

কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার মাধ্যমে। ওখানে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেই।

গণমাধ্যমে কেন এলেন?

ছোটবেলা থেকেই আমি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প, কবিতা, উপন্যাসের বই পড়তাম। সাহিত্যের প্রতি আমার আলাদা টান ছিল। স্কুলে পড়ার সময় লেখালেখি শুরু করি। স্কুলের দেয়াল পত্রিকায় আমার লেখা নিয়মিত ছাপা হত। তখন ছড়া, কবিতা ও ছোটগল্প লিখতাম। সাহিত্যের প্রতি এই অনুরাগ থেকেই ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা এবং গণমাধ্যমে কর্মজীবন শুরু।

সাহিত্য চর্চার উল্লেখযোগ্য কোনো স্মৃতি?

২০০৭ সালে আমার একটা ছোট গল্প প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয়। সেবার ঈদ সংখ্যায় গল্প লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল প্রথম আলো। সেই প্রতিযোগিতায় আমি ‘সেরাগল্প’ বিভাগে পুরস্কার পাই। এটা আমার জন্য আনন্দের স্মৃতি। লেখালেখির কারণে পরবর্তীতে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সে সুযোগ পাই। যেখানে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অনেক প্রবীণ ও প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়।

এরপর?

অন্যদিনের পাট চুকিয়ে এরপর আরেকটি অনলাইন নিউজপোর্টাল জাস্ট নিউজে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে কাজ করি। সেখান থেকে ওয়ালটনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাইজিংবিডিতে যোগ দেই ২০১৩ সালে। শুরুতে রাইজিংবিডির ইংরেজি সেকশনে সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করি। মাঝে কিছুদিন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভারে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি।

ছিলেন রিপোর্টার, হলেন সাব-এডিটর। কারণ কি?

নতুন কিছু শেখা ও নতুন কিছু করার প্রবণতা আমার মধ্যে আছে। আমি সব সময় নতুন কিছু শিখতে চাই। যে কারণে যখন ইংরেজি মাধ্যমে সাব-এডিটিং সেকশনে কাজের অফার আসে, তখন নতুন কিছু শেখার বাসনায় সানন্দে তা গ্রহণ করি। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ইংরেজি ব্যাকগ্রাউন্ডটাও কাজে দিয়েছে।

রাইজিংবিডি ছেড়ে ওয়ালটনের ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন্সে কীভাবে এলেন?

রাইজিংবিডিতে ইংরেজি ভার্সনের পাশাপাশি আমি বাংলা ভার্সনেও কাজ করেছি। দীর্ঘদিন ইংরেজি ভার্সনের ইনচার্জ ছিলাম। সর্বশেষ পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এক পর্যায়ে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ আমাকে রাইজিংবিডি থেকে ওয়ালটনের ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগে নিয়ে আসেন। প্রতিষ্ঠান হয়তো মনে করেছে আমাকে দিয়ে এই কাজটি ভালো হবে। আমি নিজেও আগ্রহী ছিলাম। তাই এই পরিবর্তন। আমি এখন ওয়ালটনের ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের অ্যাসিস্টান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছি।

এখানে আপনার কাজটা কী?

ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন্সে আমার প্রধান কাজ ওয়ালটন ব্র্যান্ড, পণ্য এবং বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করা। এছাড়াও এসব ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট প্রকাশ ও প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। এর মাধ্যমে আমরা মূলত প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করে থাকি।

আপনার কাজে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

আমি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি বিটের সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করে থাকি। কেননা, আমি ওয়ালটনের প্রযুক্তি পণ্য যেমন মোবাইল ফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপের নতুন নতুন খবর সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ালটনকে প্রচারণায় আনার জন্য তারা তাদের সংবাদ মাধ্যমে এগুলো প্রচার করছে। এসব কনটেন্টের নিউজ ভ্যালু রয়েছে। কারণ প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ওয়ালটনের পণ্য শোভা পাচ্ছে। এদেশের মানুষ জানতে চায় ওয়ালটন নতুন কি পণ্য আনলো। মিডিয়ার কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়াও পাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে ব্র্যান্ডিং কীভাবে করেন?

ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমান-সম্পন্ন ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক, হোম-অ্যাপ্লায়ান্স এবং প্রযুক্তি পণ্য বাজারে ছাড়ে ওয়ালটন। যখন নতুন কোনো পণ্য বাজারে আসে বা উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো উপযুক্ত বলে কর্তৃপক্ষ মনে করেন, তখন তারা যে নির্দেশনা দেন, সেই অনুযায়ী আমরা কনটেন্ট প্রস্তুত করি। এছাড়াও আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চাহিদা বুঝতে চেষ্টা করি। সব দিক বিবেচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় ও সময়যোপযোগী কনটেন্ট তৈরি করি। যাতে ক্রেতারা ওই কনটেন্টটি পড়ে আমাদের পণ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। ক্রেতারা আমাদের বিভিন্ন অফার, বাজারে নতুন আসা পণ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারেন।

ফেসবুকে ওয়ালটনের মিডিয়া উইং চালুর পরিকল্পনা আছে কি?

সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক বর্তমানে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যোগাযোগ রক্ষায় ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ওয়ালটনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য সম্পর্কে তথ্য আছে। সেখানে ক্রেতারা বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা বা মন্তব্যও করতে পারছেন। দ্রুততম সময়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ওয়ালটনের ওয়েবসাইটটিকে আমরা বলছি ই-প্লাজা। এটি ই-কমার্স হিসেবে কাজ করছে। এর বাইরে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে। কিন্তু ফেসবুকে ওয়ালটনের মিডিয়া উইং চালুর ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে সেটা যদি আমাদের কাজে সুবিধা হয়, তবে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

ই-কমার্সে ওয়ালটনের পণ্য কতটা সাড়া পাচ্ছে?

ওয়ালটনের পণ্য এখন ওয়ালটন প্লাজা, ওয়ালটনের শোরুম ছাড়াও ই-কমার্সে মিলছে। ই-কমার্সে কেনাকাটা উৎসাহিত করতে এখানে ছাড়ও দেয়া হচ্ছে। ওয়ালটনের ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন এবং অনলাইন থেকে ক্রয়ের ফরমায়েস দিয়ে পণ্যটি ঘরে বসেই কিনতে পারছেন। বিক্রয়োত্তর সেবায় খুব শিগগিরই অনলাইনভিত্তিক সেবাও চালু হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসেই জানতে পারবেন পণ্যটি কোন পর্যায়ে আছে, কখন ডেলিভারি হবে ইত্যাদি। এসব কারণে ই-কমার্সেও সাড়া পাচ্ছে ওয়ালটনের পণ্য।

ওয়ালটনে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমি এখানে নতুন। প্রতিনিয়ত শিখছি এবং অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে আমার ডিপার্টমেন্ট প্রধান উদয় হাকিম স্যার বিশেষ সহযোগিতা করছেন। আমি ওনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওয়ালটন ইতোমধ্যে দেশের লিডিং ব্র্যান্ড হিসেবে মানুষের কাছে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে ওয়ালটন এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বহির্বিশ্বে যাচ্ছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ইলেকট্রনিক্স পণ্য। এর পেছনে আছে কর্তৃপক্ষের সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টা। আমার সৌভাগ্য যে আমি এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের। আমার লক্ষ্য হলো নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানের এই অগ্রযাত্রায় যতটুকু সম্ভব অবদান রাখা।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/এজেড/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা