দুর্নীতি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ১৬:১৭ | আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭, ১৭:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করছেন না অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বুধবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বেশির কারণ হিসেবে জমির উচ্চমূল্যের বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘সরকারি কাজ করতে জমি নিতে ঝামেলা হয়। যদি কেউ শুনে কোনো এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কাজ হবে, রাতারাতি সেখানে ঘর বানায়, দোকান বানায়, তারপর তার পজিশন দাবি করে। ফলে জমি কিনতে অনেক টাকা লেগে যায়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের জমির মালিক সে দেশের সরকার। তাই তাদের জমি কেনার খরচ লাগে না। তারওপর আমাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।’

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার বিষয়েও প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমাদেরকে বছরের পর বছর সেবা দিচ্ছে। তাদের তো আমরা মেরে ফেলতে পারি না। আপনার একটি দুধওয়ালা গাভীর অসুখ হলে তাকে তো আপনি মেরে না ফেলে তার চিকিৎসা করাবেন। তবে আমরা ব্যাংকে দুর্নীতি যেন না হয়, সে দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। দুর্নীতির দায়ে কয়েকজন জেলেও আছে।’

বর্তমান সরকার জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয় দাবি করে মান্নান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর যেসব আলোচনা ও প্রস্তাব উঠে আসছে সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সরকার বোবা-কালা নয়, আমরা সবার কথা শুনি, সবার কথার মূল্যায়ন করি। রাস্তার দেয়াল লিখনের কথাও আমাদের কাছে গুরুত্ব পায়।’

মান্নান বলেন, ‘যেভাবে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাতে আমি আনন্দিত। এটা সরকারের ক্রেডিট। কারণ অতীতে বাজেট ছিল একটা লুকানোর বিষয়, ভীতির বিষয় সংশয়ের বিষয়। কিন্তু এবার সবাই এটা নিয়ে কথা বলতে পারছে। এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচেয়ে বড় অর্জন। তিনি বাজেটে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন।’

এক লাখ টাকার ওপরের ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত মওকুফ করে দিয়েছি। ৮৫ শতাংশ অ্যাকাউন্টই এর মধ্যে পড়ে। তবে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সিরিয়াস হিসেবে দেখিছি।এটা নিয়ে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।’

আবগারি শুল্কের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের মতামতের গুরুত্ব আমাদের কাছে আছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে বলে আশা করি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবগারি শুল্ক আছে ১৯৪৭ সাল থেকে। আগে কম ছিল। সেটি বেড়ে ৫০০ টাকা হয়েছে। এটা সব অ্যাকাউন্টে ছিল। এক হাজার টাকার অ্যাকাউন্টেও ছিল। এক কোটি টাকার অ্যাকাউন্টেও ছিল। সবাই এটা দিয়ে আসছি। বরং এখন বড় অ্যাকাউন্টে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।’

১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাট আইন আমাদের ২০১২ সালে হয়েছে, এবার বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। কিছুটা হোঁচট খাবে, ধাক্কা লাগবে, কষ্ট হবে, কিন্তু আমাদের এই আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল আলোচনায় জাতীয় বাজেট বিষয়ে একটি প্রেজেনটেশন দেখান। যেখানে বাজেটের বিভিন্ন দিত উঠে আসে। বক্তব্য রাখেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট এ এম শামিম।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/জেআর)