রাঙামাটিতে মানবিক বিপর্যয়

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৭, ০৯:৫৯ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭, ১৭:২৮

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি থেকে

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গত সোমবার পাহাড়ধসে ১০৭ জনের মৃত্যু ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চারদিন ধরে রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।তিনদিন ধরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে শুক্রবার সকালে শহরে বিদ্যুৎ আসলেও পুরো জেলায় এখনো ফিরেনি। এতে করে বিদ্যুৎ নির্ভর সকল ধরনের কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সরবরাহ সংকটে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে শাক সবজিসহ ভোগ্যপণ্যের দাম। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা শহরের মানুষ।

নানিয়াচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলাগুলো রাঙামাটি শহর নির্ভর হওয়ায় এ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে সেখানেও। রাঙামাটি শহরে জিনিসপত্র না থাকায় উপজেলায়ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

রাঙামাটি শহরে বৃহস্পতিবার সকালে ২৫ টাকার গোল আলু বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৯০ টাকা, ৯০ টাকার অকটেন বিক্রি হয়েছে লিটার ২৫০ টাকা পর্যন্ত, ৫ টাকার মোমবাতি বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা। এতেও মিলছে এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।

রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ব্যবসায়ীরা যেভাবে পরিবহন ব্যয় দেখিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম নিচ্ছে হচ্ছে, তা যক্তিযুক্ত নয়। বাজারে এ অবস্থার অবসানে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম কাজ করছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নতুন করে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

সকালে সার্কিট হাউজ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় চড়–ই বেগম, পোস্ট অফিস কলোনি থেকে রুপম দত্ত এবং মানিকছড়ি থেকে সেনা সদস্য কর্পোরেল আজিজুল হকের লাশ। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০৭ জন।

শিমুলতলি, রাঙাপানী, ভেদভেদীসহ বেশ কিছু বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ফিরতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা। বসবাস অনুপযোগী হওয়ায় শত শত লোকজন ঘরের ভেতর জিনিসপত্র বের করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছেন।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ পরিচালক মো. জসীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসছে। স্বজনদের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আজ শুক্রবার দুপুরের পর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাময়িকভাবে যান চলাচল করতে পারবে। এই সড়কে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরোপুরি সচল করতে এক কোটির ওপরে টাকা লাগবে।

আবু মুছা বলেন, আমরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটিকে প্রধান গুরুত্ব দিচ্ছি। এরপর রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে কাজ শুরু করা হবে। এখানে বেশি সময় লাগবে না।

জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তারা অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন।  লক্ষ্য ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় কাজ ব্যহত হচ্ছে। কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল লাইনের কাজ করা হচ্ছে। এ কাজ ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুকিমারা পর্যন্ত সচল করা হয়েছে।

শুক্রবার মূল লাইনের কাজ শেষে রাঙামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, রাঙামাটির জন্য এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বড় ধরনের ধাক্কা। ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হয়েছে। এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন সবাই।

গত মঙ্গলবার ভোর ও সকালে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে সেনাবাহিনী চার সদস্যসহ ১০৭ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি শহর এলাকায় মারা যায় ৬৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, বিলাইছড়ি ৩ জন এবং জুরাছড়ি উপজেলায় মারা গেছে ২ জন।

নিহত সেনাবাহিনীর সদস্যরা হলেন- মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, ল্যান্স কর্পোরাল আজিজুল এবং সিপাহী শাহিন।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মীরা।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/প্রতিনিধি/ইএস)