রাঙ্গামাটিতে কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০১৭, ১১:২৩

হিমেল চাকমা, রাঙ্গামাটি

পাহাড় ধসের ছয় দিন পর রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই নৌপথে নৌযান চালু হওয়ায় কমতে শুরু করেছে দ্রব্যমূল্য। তবে এখনও দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।

দুর্ঘটনার পর আলুর দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকা হয়ে গেলেও এখন তা পাওয়া যাচ্ছে ২৫ টাকার মধ্যে। চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। ভোজ্য তেলের দামও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজারে ফলের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। কারণ, এখানকার উৎপাদিত ফল জেলার বাইরে যেতে পারছেন না। সরবরাহ কমে গেছে মাছ-মাংসের।

জ্বালানি তেলের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হয়ে গেলেও চালান চলে আসার পর এটি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় নেমে এসেছে। সরবরাহ বাড়লেও এখনও সংকট হয়েছে। জ্বালানি না থাকায় অনেক চালক সড়কে গাড়ি বের করতে পারেননি।

শহরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে আসা যানগুলো রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শালবাগান এলাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে গেছে।

এরপর যাত্রীরা শালবনের ধসে পড়া সড়ক পায়ে হেঁটে পার হয়ে অটোরিকশায় করে শহরে প্রবেশ করে। এসময় যাত্রীদের মধ্যে চরম দুর্ভোগ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি সড়কে এখনও কোনো যান চলাচল করছে না।

রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই নেভি ক্যাম্প পর্যন্ত নৌযান চালু করার কারণে অনেকে এই রুট ব্যবহার করে কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য এলাকায় যাচ্ছে। অন্যান্য এলাকা থেকেও কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটি আসছে।

ত্রাণ বিতরণে ধীরগতি:

আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া অনেকে আছেন এক কাপড়ে। বাড়িঘর মাটির নিচে চলে যাওয়ায় অনেকে এক কাপড়ে কোনো রকমে জীবন রক্ষা করেছেন। তাদের অভিযোগ পানি খাবার বিতরণ করা হলেও তাদের কাপড় দেওয়া হয়নি। রাঙাপানি ভাবনা কেন্দ্র, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বেতার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের অভিযোগ যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে তাও পর্যাপ্ত নয়।

 

গতকাল শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ শিং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি প্রাথমিক। খাবার চিকিৎসা তাদের দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যা যা করণীয় তা সরকার করে যাচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে এটি স্বাভাবিক করতে কেউ বসে নেই, কাজ চলছে। সড়ক জনপদ, এলজিইডি সবাই একসঙ্গে কাজ করছে।’

গত মঙ্গলবার ভোর ও সকালে রাঙামাটি জেলা বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্য ১১৩ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি শহর এলাকায় মারা যায় ৬৭ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, বিলাইছড়িতে তিন জন এবং জুরাছড়ি উপজেলায় মারা গেছে দুই জন।
 
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত দুই জন। তাদেরকে উদ্ধাদের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মীরা।

রাঙ্গামাটি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মো. কাজী  হুমায়ন বলেন, গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৪৩.৪ মিলিমিটার। এটি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

ঢাকাটাইমস/১৮জুন/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি