ঈদের পর প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান: খালেদা

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০১৭, ২১:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান’ কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়ে জনগণকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান নিতে হবে নিজেদের। রাজপথে অবস্থান নেয়ার সময় আসবে ঈদের পর।’

রবিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। ২০ দরীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এই ইফতারের আয়োজন করে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নীতি নেই, আর্দশ নেই। এরা শুধু লুটপাট করতে জানে। আমরা দেশের মানুষকে বলতে চাই, এই আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান হোন, এদেশকে বাঁচান। সবাই এক হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন।’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চাই, মহাসচিবের ওপর এই হামলা হলো, তারপরে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তা্র করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। আমাদের লোকজন কিছু না করলেও সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ওদের ধরতে হবে, তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে, জেলে পুরতে হবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলায় ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকের এই হামলার ঘটনায় প্রমাণ হলো দেশে যত সন্ত্রাস, যত বিশৃঙ্খলা, যত অরাজকতা- সব আওয়ামী লীগ করেছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটনায় আওয়ামী লীগ তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। সেখানে এই দুর্যোগ বিএনপি বড় দল হিসেবে সেখানে মহাসচিবের নেতৃত্বে একটা টিম গেছে, তারা দেখবে, তাদের সাহায্য করবে। ওখানে রাস্তাঘাট খারাপ ছিল, আমাদের লোকেরাই ঠিক করে দিয়েছে যাতে আমাদের নেতারা সেখানে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে বিএনপি নেতারা যাওয়ার পর আওয়ামী তাদের ওপর আক্রমণ করেছে তা আপনারা দেখেছেন।’

‘এই অবস্থায় বিএনপি যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে অন্য মানুষদের কী করে নিরাপদ থাকবে। যখন তখন মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় না।’ অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সকালে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি পরিদর্শনে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের অপশাসন ও বাজেটের সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি করারোপের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা খেতে পারি না, দেশের মানুষ খেতে পারবে না, শুধু ট্যাক্স দিতে হবে, ভ্যাট দিতে হবে, অমুক দিতে হবে, আওয়ামী লীগের মার খেতে হবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় বন্দী থাকতে হবে। নাহলে এই গুম-খুনের শিকার হতে হবে। এগুলো মানুষ চায় না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘জনগণকে বলব, এ থেকে নিজেরা বাঁচতে চান, নিজেদের পরিবারের স্বজনদের বাঁচাতে চান এবং দেশটাকে বাঁচাতে চান- তাহলে আসুন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব দলকে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে সবাই মিলে যেটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি হবে, সেই কর্মসূচি দিয়ে আমরা এদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবো।’

খালেদা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এদেশে নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থেকে এদেশে নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে, ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমি দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বলতে চাই, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বা্চন দিলে সেই নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করবে না, সেই নির্বাচন দেশ হতে দেয়া হবে না।’

২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১১ দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ওইসময় নির্বাচনে এসেও যখন তারা দেখলো তাদের অবস্থা ভালো নয়, তখন তারা সেই নির্বাচন থেকে সরে গেল, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলো। পরে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজসে সেখানে এই নির্বাচন বানচাল করে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে সামরিক শাসন জারির ব্যবস্থা করলো।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন থেকে যে অবস্থা শুরু করেছে তাহলে আওয়ামী লীগের অধীনে কী করে নির্বাচন হবে? সেজন্য আমরা ঈদের পরে পরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব এবং আপনারাও (শরিকরা) যারা আছেন, নিজেরা দেবেন- একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আওয়ামী লীগ থাকলে তার গুন্ডা বাহিনী থাকবে, তার পেটুয়া বাহিনী থাকবে, যাকে সেখানে বসিয়েছে তারা থাকবে। নির্বাচন কমিশন একটা তাবেদার কমিশন যেকোনোভাবে আওয়ামী লীগকে জেতাবার চেষ্টা করবে।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড নির্বাচন হতে হবে। তাহলে আওয়ামী লীগের সমর্থন কতটুকু, তাদের পায়ের নিচে কতটুকু মাটি আছে বুঝতে পারবে।’

বাজেটের ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ, রিকশাচালক, শ্রমিক, মুদির দোকানদার থেকে আরম্ভ করে সাধারণ দোকাদার, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ এবং তাদের এই ভ্যাট, তাদের এই দুর্নীতি, তাদের এই লুটপাট, তাদের এই প্রশাসনে অচলাবস্থায় মানুষ ক্ষুব্ধ।’

‘সমস্ত ব্যাংক তারা লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে।এখন নতুন করে বেসিক ব্যাংকে টাকা দেয়া শুরু করেছে। মানুষের পকেট কেটে, ট্যাক্স ও ভ্যাট বসাবে, বিদ্যুতের দাম বেশি বসাবে, সাধারণ মানুষের ওপর কর বসিয়ে তারা এই ব্যাংকে বাঁচিয়ে রাখবে। এদের কোনো নীতি নেই, এদের কোনো আদর্শ নেই। এরা শুধু লুটপাট ছাড়া কিছু জানে না। ৭৪ সালে এই করে মানুষকে না খাইয়ে দুর্ভিক্ষ করেছিল। অথচ তারা নিজেদের সবাই সোনার মুকুট পরে একেকজনের বিয়ে হয়েছে-আপনারা তা দেখেছেন। এখন আবার ৭৪ অবস্থা বিরাজ করবার অবস্থার মতো এসে যাচ্ছে।’ –বলেন বিএনপি নেত্রী।

জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।

ইফতারে ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপা‘র অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/বিইউ/জেবি)