চাল আমদানিতে শুল্ক কমলো

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৭, ১৪:০৮ | আপডেট: ২০ জুন ২০১৭, ১৭:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলায় পণ্যটি আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এর ফলে প্রতি কেজিতে চালের দাম ছয় থেকে সাত টাকা কমবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রতিযোগিতা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কহার আরোপ করা হয়। ২০১৬-১৭ বাজেটে আরও ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর মিলে এ শুল্কহার দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। দেশের বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি কমাতে পণ্যটি আমদানিতে শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।’এ বিষয়ে শিগগিরই আদেশ জারি হবে জানান তিনি।

এতদিন বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির মুখে সরকারের চালের মজুদও তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে সরকার।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলো কোনো  ‘মার্জিন’ ধার্য করতে পারবে না। অর্থাৎ, চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা থাকতে হবে না। তারা বাকিতে চাল আমদানি করতে পারবেন এবং চাল দেশে আসার পর ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন।

হাওরাঞ্চলে বন্যা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের স্বাভাবিক সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম গত তিন মাস ধরে বাড়তে থাকায় কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি; চিকন চালের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।

সন্তোষজনক বাড়তি মজুদ থাকায় আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালের শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি তিন শতাংশ যোগ হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুণতে হয়।

ফলে গত দেড় বছর ধরে বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানি প্রায় বন্ধ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চাল আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ।

কিন্তু এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবেই হাওরে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হওয়ায় এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুদ তলানিতে নেমে আসে।

গতবছর এপ্রিলে যেখানে সরকারি গুদামগুলোতে সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল ছিল, সেখানে এ বছর ১৫ জুনে তা ১ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টনে ঠেকেছে।

এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সরকারিভাবে মোট ছয় লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়। পরে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই লাখ টন আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

এর মধ্যে প্রথম দেড় লাখ টনের দরপত্র দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার আরও ৫০ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র চাওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এমএম/এমআর/জেবি)