রংপুরে জমেছে কেনাকাটা, দেশি কাপড়ে ঝোঁক কম

প্রকাশ | ২২ জুন ২০১৭, ০৯:৫৮ | আপডেট: ২২ জুন ২০১৭, ১০:০৩

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর থেকে

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদকে ঘিরে রংপুরে শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। সকাল থেকে রাত অবধি ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে নগরীর অভিজাত মার্কেট থেকে ফুটপাতের বিপনী বিতানগুলোতে।

তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় একবার একটু ভিন্নতা রয়েছে মার্কেটগুলোতে। ক্রেতারা বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে পণ্য দেখছেন। মার্কেটগুলোতে পছন্দের পোশাক মিললেও দামে মিলছে না। আর নির্দিষ্ট দামের পোশাকে মন বসছে না তাদের। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের ঘোরাফেরার মূল কারণ হলো তারা ভারত এবং পাকিস্তানি পোশাক খুঁজছেন। আর এই পোশাকগুলোতে এবার দামটা একটু চড়া হওয়ায় ক্রেতারা বেশি ঘুরে ফিরে যাচাই বাচাই করছেন।

মার্কেটঘুরে দেখা গেছে, এই বছরও ভারতীয় পোশাকের কদর বেশি রংপুরে। শিশু থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীরাও ভারতীয় পোশাকের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ঈদের বাজারের প্রায় পুরোটাই ভারতীয় পোশাকের দখলে। অবৈধভাবে সীমান্ত গলিয়ে আসা ভারতীয় শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অনেক পোশাকও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এই অঞ্চলের বাজারগুলোতে। বাহারি ডিজাইন, ভারতীয় অভিনেতা অভিনেত্রী ও সিরিয়ালের নামের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক কিনছেন তারা।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে,  রংপুরসহ এই অঞ্চলের বড় ছোট সব ধরনের দোকানেই ঈদের বাজারের পোশাকসহ সকল সামগ্রী ভারতীয় ব্রান্ডের দখলে।  শুধু ভারতীয় কাপড়ই নয়, নাম ধামও ভারতীয় অভিনেতা, অভিনেত্রী ও সিরিয়ালের নামেই চলছে। এ বছর এই অঞ্চলের বাজারে শাড়ির মধ্যে জলনুপুর, টাপুর টুপুর, বাহা, জামদানী, গোপি বৌ ব্রান্ড ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, মেয়েদের পাগলু, বিপাশা বসু, জান্নাত-টু, আশিকী-২, জিপসি ৩৫০ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, ছেলেদের কার্গো জিন্স, থাই, ডিসকার্ড-২, সিম ফিট, ফরমাল টি শার্ট ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, ছোটদের লেহেঙ্গা, মাসাক্কালী, সিঙ্গেল টপ, টপসেট, গেঞ্জিসেট ১ হাজার ২০০ থেকে ৭ হাজার টাকা, পাঞ্জাবির মধ্যে বড়দের ছোটদের ধুতি কাতান, ৩৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার এবং আকর্ষণীয় শেরওয়ানী ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন দোকানিরা। ভারতীয় পোশাকের আড়ালে হারিয়ে গেছে এবারের ঈদের বাজারে দেশীয় তৈরি উত্তরাঞ্চলের পাবনা, সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেনারশী, শতরঞ্জির মতো বিখ্যাতসব ব্রান্ডের দেশীয় কাপড়ের নাম।

অনুসন্ধানে প্রকাশ, ভারতীয় একটি সংঘবদ্ধ চোরাই সিন্ডিকেট এখন এই অঞ্চলের সীমান্তসহ বিভিন্ন হাটবাজারে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এদেশের কিছু দালাল ও ফড়িয়াগোষ্ঠী। দুই দেশের চোরাকারবারি সিন্ডিকেটটি সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে আনছেন ভারতীয় এসব পণ্য।

কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সীমান্তে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চোরাকারবারি চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। ভোর পর্যন্ত চলে তাদের এই ভারতীয় কাপড়সহ পণ্য আনা নেয়ার কাজ।

রংপুর জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী শেখ শাহিন ঢাকাটাইমসকে জানান, মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ে জায়গা নেই। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতি থাকছে। তারা বিভিন্ন দোকানে ঘুরে বিদেশি পোশাক খুঁজছেন। এবার ভারতীয় পোশাকের কদর বেশি বলে জানান তিনি।

গাউসিয়া ফেব্রিক্সের মালিক আব্দুর রহিম জানান, তার দোকানে ভারতীয় লং ড্রেস বেশি বিক্রি হচ্ছে।

রংপুর সুপার মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা মাহিগঞ্জ কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মারিয়া ইবনে শাকিল ঢাকাটাইমসকে জানান, এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। যেহেতু ঈদ করতেই হবে তাই ফ্রোর টাস গ্রাউন পাকিস্তানি একটা পোশাক কিনলাম। তবে দামটা বেশি নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন ঢাকাটাইমসকে জানান, নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশাত্ববোধ তৈরি করতে প্রয়োজন সবার প্রচেষ্টা। বিশেষ করে পোশাক ডিজাইনার তাদের নজর দেয়া উচিৎ। ভারতীয় বা অন্যকোনো দেশের পোশাকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে তরুণ তরুণিরা। সে ক্ষেত্রে ভালো ডিজাইনের পোশাক হলে তারাই দেশীয় পোশাক ক্রয় করতো। এক্ষেত্রে দেশীয় ব্যবসাযীরা লাভবান হতো এবং সরকারের রাজস্ব বাড়তো। তাই পোশাক ডিজাইনারদের প্রতিও ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে ঈদ মার্কেটে আসা লোকজনের নিরাপত্তার ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাকিফুল ইসলাম সাইফ বলেন, নগরবাসীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২২জুন/আরআই/এমআর