গরুর মাংস খাওয়ার কথা বলে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৭, ১০:৪৪ | আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭, ১০:৪৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

গরুর মাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ঘেঁষা হরিয়ানা রাজ্যে লোকাল ট্রেনে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম জুনাইদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লি থেকে হরিয়ানা ফেরার লোকাল ট্রেনেই তাদের উপর হামলা হয়।

জানা যায়, ১৫ বছরের জুনাইদ ঘটনার দিন রোজা ছিল এবং বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। হরিয়ানার বল্লভগড়ের গ্রামের বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে ইফতার করার কথা ছিল। কিন্তু জুনেইদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

পুলিশের ধারণা, ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকেই এই হামলা হয়েছে।

ট্রেনের একদল যাত্রী প্রথমে গো-হত্যা ও গোমাংস খাওয়ার জন্য জুনেইদদের গালাগালি করে। তাদের টুপি খুলে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়ায়, তারপর গণপিটুনি। শেষে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় জুনেইদের। তার সঙ্গী দুই তরুণ মইন ও মহসিন এবং বড়ভাই শাকির গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে। 

রাহুল গান্ধী এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই রাজত্বে গণহত্যাকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ধরনের অমানবিক ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হোক।’

বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের কর্তাদের আচরণেই স্পষ্ট, তারা এসবে মদত দিচ্ছেন।

বল্লভগড়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রমেশ নামে ওই অভিযুক্ত বলেন, ‘আমি মদ খেয়ে ছিলাম। বন্ধুরা বলছিল, ওরা গরুর মাংস খায়।’

জুনেইদের ভাইয়ের অভিযোগ, দিল্লির সদর বাজার থেকে দিল্লি-মথুরা যাত্রীবাহী ট্রেনে ওঠেন তারা। ওখলা থেকে একদল যাত্রী উঠে তাদের সিট ছেড়ে দিতে বলে। জুনেইদ একজনকে আসন ছেড়েও দেয়। কিন্তু সকলকেই সিট ছাড়তে বলা হয়। তাতেই বাদানুবাদের শুরু।

শাকির বলেন, ‘হঠাৎই একদল লোক বলতে থাকে, এরা গরু মারে, গোমাংস খায়। এদের মারাই উচিত! বলেই আমাদের মারতে শুরু করল। ভাইকে তো মেরেই ফেলল।’

জুনেইদদের বল্লভগড়ে নামতেও দেওয়া হয়নি। বিপন্ন জুনেইদের ফোন পেয়ে দাদা শাকির স্টেশনে ছুটে এসেছিলেন। তাকেও ট্রেনে তুলে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে পরের স্টেশন আসাবটীর প্ল্যাটফর্মে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা।

বল্লভগড়ের এসপি কমলদীপ গয়াল বলেন, ‘বাদানুবাদের সময় এমন কিছু শব্দ ব্যবহার হয়, যাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে ধাক্কা লাগে। তাতেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।’

শনিবার সকালে সিপিএমের বৃন্দা কারাট, মুহাম্মদ সেলিম জুনেইদের গ্রামে যান। বৃন্দা বলেন, ‘গ্রামেরা লোকরা বলছেন, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। টুপি, দাড়ির জন্য যাদের সহজেই মুসলিম বলে চিহ্নিত করা যায়, তারা নিয়মিত এসব ট্রেনে আক্রান্ত হন।’

সুরাতের মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে হরিয়ানায় ফিরেছিল জুনেইদ। বাবা জালালুদ্দিন গাড়ির চালক। বড় ভাই শাকির খাবারের দোকান চালান।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/জেএস)