রাঙ্গামাটিতে বিষাদময় ঈদ

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৭, ১৩:৩০ | আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭, ২৩:৪২

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি প্রতিনিধি

ঈদের জামাত হয়েছে, সাধ্যমত নতুন পোশাক আর খাবারও আছে, কিন্তু মনের কোণে বিষাদ। পাহাড় ধসে ক্ষতবিক্ষত রাঙ্গামাটিতে এবার আনন্দ নিয়ে আসেনি ঈদ। বিশেষ করে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে তাদের চোখেমুখে অনিশ্চয়তা আর ঘরে আগের বছরগুলোতে ঈদের আনন্দ স্মরণ করে হতাশাই মুখ্য।

গত ১৩ জুন ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্যাঞ্চলে নিহত হয় দেড় শতাধিক মানুষ। পাহাড় ধসে শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঠাঁই এখনো আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে।

রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসনের হিসাবে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২৯ শ’ মানুষ আছেন। সেনাবাহিনী আর প্রশাসনের সমন্বয়ে তাদের খাদ্য ও জররুর চিকিৎসার বন্দোবস্ত হলেও, এখনো স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরতে পারেনি তারা।

সোমবার সকালে রাঙ্গামাটির আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ শিশুসহ সবাই নতুন কাপড় পড়েছেন। শিশুদের মাঝে ঈদের আনন্দ দেখা গেলেও বয়স্কদের মাঝে ঈদ আনন্দ চোখে পড়েনি।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া পরিবার গুলোর ঈদ কেমন কাটছে জানতে চাইলে বেতার কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া শাহিনা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রশাসনের কাছ থেকে খাবার পাচ্ছি। প্রাশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সকলের জন্য ঈদের নতুন কাপড় দিয়েছে। কিন্তু নিজেদের ঘরে ঈদ করতে পারছি না, এটাই মনের কষ্ট।’

কথা হয় আশ্রয় কেন্দ্রের নুর জাহান বেগমের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের ওপর দিয়ে বিরাট বিপদ গেছে, আমরা সবাই দুঃখী মানুষ। একে অপরকে দেখে এর মাঝে দু:খ আনন্দ ভাগাভাগি করেই ঈদ করছি।’

রাঙামাটি সরকারি কলেজে আশ্রয় নেয়া রূপনগরের আট বছরের ছেলে আমজাদ  তার বন্ধুদের নিয়ে কলেজ মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার কাছে জানতে চাইলে আমজাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পাহাড় ভেঙে আমার বন্ধুদের ঘরও ভেঙে গেছে। তাই এবার ঈদে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারছি না। আজ সকালে সেনাবাহিনী আমাদের নাস্তা দিয়েছে। গতকাল আমাদের নতুন কাপড়ও দিয়েছে।’

রাঙ্গামাটি টেলিভিশন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাহাড় ধসে আমরা অতঙ্কিত ছিলাম, কখন যে ঈদ এসে গেল খেয়াল করতে পারিনি। মনে হচ্ছে এবার দ্রুতই ঈদ এসে গেছে।’

ওই আশ্রয়কেন্দ্রের মামুন প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।  ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের জন্য যা করছে তাতে তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তারা আমাদের জন্য যথেষ্ট করেছে, কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আমাদের একটি নির্দিষ্ট ঘর দরকার। আমার ঘর পুরো মাটির সাথে মিশে গেছে।’

আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা গেছে। দুপুর ১২ টার দিকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছে।

ঢাকাটাইমস/২৬জুন/ডব্লিউবি/জিএম